আমদানি বাড়লেও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ভোজ্যতেলের দাম। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য তৈরিতে সর্বাধিক ব্যবহৃত পাম অয়েলের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তার কার্যকারিতা নেই।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম আট মাসে প্রায় সোয়া দুই লাখ টন পাম অয়েল আমদানি বেড়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৮৫০ টাকা।
জানা যায়, দেশে খাদ্যপণ্য হিসেবে বেকারি আইটেম, ফাস্টফুড, কসমেটিকস টয়লেট্রিজ সামগ্রী, ওষুধ ও পশুখাদ্য হিসেবে পাম অয়েলের ব্যবহার হয়। খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কারখানায় ব্যবহারের জন্য পাম অয়েল সরাসরি আমদানি করে। তবে বেশিরভাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাইকারি বাজারের মাধ্যমে আমদানিকারক থেকে সংগ্রহ করে কারখানায় পাম অয়েল ব্যবহার করেন।
খাতুনগঞ্জের আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ জানানা- গত বছর এই সময়ে পাম অয়েলের বুকিং রেট ছিল ৯৫০ ডলারের মতো। এখন একই পাম অয়েলের বুকিং রেট ১১শ ডলারের কাছাকাছি। যে কারণে বাজারে দাম বেড়েছে।-
২০২৪ সালে দেশের আলোচিত-সমালোচিত শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপ আমদানি তালিকায় থাকলেও ২০২৫ সালে তারা কোনো পাম অয়েল আমদানি করেনি। তবে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের বেয়াই মীর আবদুছ সালামের মালিকানাধীন মীর বনস্পতি প্রোডাক্টস চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৩৫ হাজার ৯৯৯ টন পাম অয়েল আমদানি করেছে।
চলতি বছর এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগে এসেছে চট্টগ্রামের আরেক শিল্প গ্রুপ সিকম গ্রুপ। সিকম গ্রুপ তাদের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও রূপসা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের নামে ৪৫ হাজার ৭০২ টন পাম অয়েল আমদানি করেছে।
একই সঙ্গে প্রাণ গ্রুপ তাদের চারটি প্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো লিমিটেড, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড, প্রাণ ফুড লিমিটেড ও প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের নামে ১৫ হাজার ৯৫৬ টন পাম অয়েল আমদানি করে। প্রাণ পুরোটাই নিজেদের খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনে ব্যবহার করে।
সরকার দায়সারাভাবে কিছু কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। এসব নির্ধারিত দাম কার্যকরে সরকারি তদারককারী সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।-ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন
দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। বড় আমদানিকারকরা ক্রুড পাম অয়েল আমদানি করে নিজেদের কারখানায় পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ দেন। এর মধ্যে টিকে, সিটি, আবুল খায়ের, মেঘনা, মীর গ্রুপ পাইকারি বাজারে পরিশোধিত পাম অয়েল বিক্রি করে। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে এসব পরিশোধিত পাম অয়েল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে সংগ্রহ করে। মণপ্রতি ডিও’র (ডেলিভারি অর্ডার) মাধ্যমে তারা এসব খোলা পাম অয়েল কেনেন।
চলতি বছরের ১২ আগস্ট পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এর আগে পাম তেলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা। সরকার পাম অয়েলের দাম কমালেও পাইকারি বাজারে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। সরকারিভাবে পাম অয়েলের দাম কমানোর পর থেকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে উল্টো বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত লিটারপ্রতি ১৫০ টাকা হিসেবে এক মণ (৩৭ দশমিক তিন দুই কেজি) পাম অয়েলের দাম হওয়ার কথা ছিল পাঁচ হাজার ৫৯৮ টাকা। গত মাসের ১২ আগস্ট যখন সরকার দাম নির্ধারণ করে তখন নির্ধারিত দামের কাছাকাছি ছিল বাজার। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে মণপ্রতি ৪০০-৪৫০ টাকা দাম বেড়েছে পাম অয়েলের। সবশেষ শনিবার খাতুনগঞ্জে টিকে, আবুল খায়ের, মীর, সিটি গ্রুপের পাম অয়েল মণপ্রতি ছয় হাজার ৪০ টাকা থেকে ছয় হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে দাম বাড়ার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক বুকিংমূল্য বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখছেন খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
প্রদা/ডিও