ইলিশ পদ্মার, নাকি গঙ্গার—এই বিতর্ক বহুদিনের। দুই বাংলার মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি ও ভোজনরসিকতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই মাছ।
তবু কলকাতার একাংশের অভিযোগ, গঙ্গার ইলিশকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রশ্ন উঠছে—কেন পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের মতো ইলিশ ধরার নীতি গড়ে তোলা হয়নি?
গঙ্গার ইলিশ কি তবে কেবল ভিআইপিদের জন্য? সাধারণ গঙ্গাপাড়ের মানুষ কেন এর স্বাদ পাবেন না? কলকাতার হোটেল-রেস্তোরাঁয় গঙ্গার ইলিশের কিছুটা ভাগ হয়তো ভিআইপি টেবিলে ওঠে, কিন্তু স্থানীয় বাজারে তার দেখা মেলে খুব কমই।
তবে ভোজনরসিক বাঙালির কাছে ইলিশ কেবল একটি মাছ নয়—এটি আবেগ, ঐতিহ্য এবং দুই বাংলার সম্পর্কের সেতুবন্ধন। পদ্মা হোক বা গঙ্গা, ইলিশের স্বাদ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই মাছকে ঘিরে আবেগ দুই বাংলার মানুষকে এক সুতোয় বাঁধা।
রপ্তানি নীতি ও ভারতের বাজার
বাংলাদেশ ২০১৫ সালে জাতীয় রপ্তানি নীতিতে শর্তসাপেক্ষে ইলিশকে রপ্তানিযোগ্য তালিকায় রাখে। এরপর ২০১৯ সালে প্রথমবার পূজার মৌসুমে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি করা হয় কলকাতায়। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৮৫০ টনে।
২০২১ সালে রপ্তানির অনুমতি ছিল চার হাজার ৬০০ টন, তবে কলকাতা পায় এক হাজার ২০০ টন। ২০২২ সালে অনুমোদিত ছিল দুই হাজার ৯০০ টন, এদিকে ভারতে আসে এক হাজার ৩০০ টন। ২০২৩ সালে তিন হাজার ৯৫০ টন অনুমোদনের বিপরীতে পৌঁছায় মাত্র ৫৮৭ টন। ২০২৪ সালে অনুমতি ছিল দুই হাজার ৪২০ টন, এসেছে মাত্র ৫৭৭ টন।
চলতি বছর বাংলাদেশেই ইলিশ ধরা কম হয়েছে। তারপরও অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতের জন্য এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতার খুচরা বাজারে পৌঁছাবে পদ্মার ইলিশ।
বাংলায় জালে ওঠেনি ইলিশ, বর্তমান ভরসা গুজরাটের ইলিশ
মোদীর রাজ্য গুজরাট আর দিদির (মমতা) বাংলা। রাজনৈতিক ভাবে চরম বিরোধিতা থাকলেও এই মুহূর্তে ভোজনরসিক বাঙালির রসনা মেটাচ্ছে গুজরাটের ইলিশ। কারণ বাংলার সমুদ্র এবার নিরাশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের জালে জড়ায়নি ইলিশ। ফলে বর্তমান ভরসা গুজরাটের ইলিশ।
তথ্য মতে, গত দুমাসে গড়ে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন, গুজরাটি ইলিশ এসেছে কলকাতায়। স্বাদ মোটামুটি হলেও, চাহিদা থাকার কারণে দাম ছিল সাধ্যের মধ্যে। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ এবার খেতে পারছে ইলিশ। এমনটাই জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ।
তিনি নিজেও চরম মোদী বিরোধী। তার অভিমত, রাজনীতি ভিন্ন আর ব্যবসা ভিন্ন। ফলে মোদির রাজ্যের ইলিশ বাঙালির পাতে তুলে দিতে দ্বিধা করছেন না মাকসুদ।
কলকাতায় বাংলাদেশি ইলিশের দাম হবে আকাশ ছোঁয়া
বাংলাদেশে ইলিশ এলেই ভারতের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাতে লক্ষীলাভ হয়, খুচরা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী সবার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দাম দিয়ে হলেও বাংলাদেশের ইলিশ একবার কিনে খেতে চান সবাই। সেটাই অর্থ লাভের প্রাপ্তি।
ব্যবসায়ীরা এও জানাচ্ছেন, পূজার মৌসুমে ইলিশের চাহিদা থাকায় ভারতের খুচরা বাজারে কেজি প্রতি, বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি হবে দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার রুপিতে। বিগত বছরে অনেকক্ষেত্রে এই দামও ছাপিয়ে গিয়েছে। তবে তাতেও বাজার সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে ওঠে।
ফলে দাম আকাশছোঁয়া হলেও, এই মুহূর্তে সবাই এখন চাতকের মতো চেয়ে আছেন বাংলাদেশের ইলিশের দিকে।
প্রদা/ডিও