সারা দেশে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাতিল হওয়া ৪৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে অন্তত ৩৫ লাখ বা ৮১ শতাংশই বিতরণ করা যায়নি।
সারা দেশে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাতিল হওয়া ৪৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে অন্তত ৩৫ লাখ বা ৮১ শতাংশই বিতরণ করা যায়নি। প্রায় এক বছর পার হলেও প্রক্রিয়াগত জটিলতা, কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের ধীরগতি ও প্রকৃত উপকারভোগী শনাক্তে ব্যর্থতায় অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে বিপুলসংখ্যক এ কার্ড।
এদিকে মূল্যস্ফীতি ও সাধারণ মানুষের চাহিদা বিবেচনায় টিসিবি এখন ফ্যামিলি কার্ড ছাড়াই ট্রাক সেলের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যের পণ্য বিক্রি করছে। এতে একজন ব্যক্তি একাধিকবার পণ্য নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত উপকারভোগীর পরিবর্তে সচ্ছল ব্যক্তিরাও স্বল্পমূল্যের এসব পণ্য সংগ্রহ করছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। ফলে প্রকৃত নিম্ন আয়ের মানুষকে অনেক সময় পণ্য না পেয়েই বিক্রয় কেন্দ্র বা ট্রাকের সামনে থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পর গড়ে তোলা হয়েছিল টিসিবি। সময়ের পরিক্রমায় সংস্থাটির বিপণন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে এসব পণ্য বিক্রিতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং প্রকৃত উপকারভোগী চিহ্নিত করে তাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০২২ সালে চালু করা হয় ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ব্যবস্থা। লক্ষ্য ছিল এক কোটি পরিবারকে এ কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা। সে অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে সরাসরি উপকারভোগী হিসেবে এক কোটি পরিবারকে কার্ডটি দেয়াও হয়। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এসব কার্ড বিতরণ করছেন—শুরু থেকেই ছিল এমন অভিযোগ। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করে। একই সঙ্গে অতিদ্রুত প্রকৃত উপকারভোগীদের মধ্যে এসব কার্ড বিতরণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
সংস্থাটি দুই মাস বন্ধ থাকার পর ১০ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুনরায় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে। সে হিসেবে এবারের কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আজ। এ সময়ে ঢাকা মহানগরীর তিনটি অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং দেশের মোট ৯৪টি উপজেলায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি পরিবার সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারবে। একই সময়ে যেসব উপকারভোগীর কাছে ফ্যামিলি কার্ড নেই তাদের কিছুটা বর্ধিত মূল্যে (বাজারমূল্য থেকে কম) পণ্য কিনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকা, চিনি কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
রাজধানীর তোপখানা রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে উত্তম নগর ট্রেডার্স ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করে। সেখানকার বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের দেয়া হয় ৫০০ জনের পণ্য। কিন্তু লাইনে দাঁড়ায় এর চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিদিনই ২০০-২৫০ জনকে পণ্য না দিয়েই চলে যেতে হয়। এখন আমাদের যা দেয়া হয়, তার বাইরে কীভাবে দেব? অনেকেই এটা বুঝতে চান না। বাগ্বিতণ্ডা হয়।’
পণ্য বিক্রি নিয়ে আছে অনিয়মেরও অভিযোগ। টিসিবি কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, প্রকৃত উপকারভোগীদের সবাইকে ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে অনিয়ম বন্ধ হবে। একই সঙ্গে কাউকে আর পণ্য না নিয়ে ফেরত যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে না। যে ৩৫ লাখ কার্ড এখনো বিতরণ করা যায়নি সেসব কার্ড মূলত সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পর্যায় থেকে তালিকা চূড়ান্ত করে না আসায় বিতরণে সময় লাগছে। তবে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রদা/ডিও