বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরো জোরদার করতে দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।
এ সময় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং বাংলাদেশে চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশনের (সিইএবি) সভাপতি হান কুন উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বিআরআই এক্সিবিশনের মধ্য দিয়ে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ সক্ষমতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ এক্সিবিশন দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ও আইডিয়া শেয়ার করার প্লাটফর্ম। এর মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।’ উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ে চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা এখন প্রায় গণহত্যায় রূপ নিয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। নিম্নমানের বাণিজ্যিক যানবাহনের কারণে জনগণ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।’ এ সমস্যা সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ সময় সড়ক যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে এসে মানসম্পন্ন যানবাহন উৎপাদনের প্রস্তাব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি দেশের অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে দ্রুত ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতি বছর চীন থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। অথচ রফতানির পরিমাণ অনেক কম।’
চীন ও জাপানের অগ্রগতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘তৈরি পোশাকসহ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমরা পিছিয়ে রয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক-সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আগামী রোববার ট্যারিফ ইস্যুতে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। তাদের সঙ্গে ট্যারিফের কাঠামোগত রূপ কীভাবে দেয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।’
অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম, যারা বিআরআইতে সাড়া দিয়েছে।’ বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরো সহযোগিতার জন্য চীন প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।’
বিআরআইয়ের এবারের আয়োজনে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৮০টি বুথ অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি প্রতিষ্ঠান চীনের। প্রদর্শনীতে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহন, লজিস্টিকস ও উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করছে। পাশাপাশি থাকছে উচ্চ পর্যায়ের বিটুবি ও জিটুবি বৈঠক, সেমিনার ও বিনিয়োগবিষয়ক সেশন। এ প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রদা/ডিও