উচ্চ দরে চালের বাজারে ক্রেতার নাভিশ্বাস। স্বস্তি নেই ডিমের বাজারে।
মুরগি কিংবা পেঁয়াজও হাতের নাগালের বাইরে। অথচ সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য—বাজারের বাস্তবতায় ভোক্তা যেখানে দিশাহারা, সেখানে পরিসংখ্যানে আশার খবর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.২৯ শতাংশে। এটি গত তিন বছরে সবচেয়ে কম হার। তবে এর মানে এই নয় যে, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমেছে।
বরং উল্টো, খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে দাম আরো বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতি এখন ৭.৬০ শতাংশ, যা আগের মাসে দশমিক ০৪ পয়েন্ট কম ছিল। সহজভাবে বলতে গেলে—ভাত, ডাল, ডিম, মুরগি, পেঁয়াজের মতো প্রতিদিনের খাবারের দাম ক্রেতাদের পকেট থেকে আগের চেয়ে বেশি টাকা বের করে নিচ্ছে। কিন্তু একই সময় খাদ্যবহির্ভূত খাতের কিছু জিনিস যেমন পোশাক, টেলিযোগাযোগ খরচ, কিছু ভোগ্যপণ্য বা সেবার দাম কিছুটা কমেছে।
এর ফলেই গড় হিসাবে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে।
অর্থাৎ হিসাবের কাগজে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু যে খাতে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সেই খাবার-দাবারের দাম এখনো উঁচুতেই রয়ে গেছে। ফলে সরকারি পরিসংখ্যান ইতিবাচক হলেও ভোক্তার জীবনে সেই স্বস্তি আসছে না।
সবজির দামও বেশ চড়া—কাঁচা মরিচ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, টমেটো ১৫০ টাকার ওপরে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম না কমলে খুচরা বাজারে দাম কমানো সম্ভব নয়। আবার আমদানিনির্ভর পণ্যে ডলার রেট স্থিতিশীল হওয়ায় নতুন করে দাম বাড়েনি। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৪৮ শতাংশ, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৫৫ শতাংশে। কিন্তু আগস্টে হঠাৎ কমে আসে ৮.২৯ শতাংশে। খাদ্য খাতে চাপ থাকলেও খাদ্য বহির্ভূত খাতে দাম কমার ফলে এই পরিবর্তন এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভোক্তার জীবনযাত্রায় খাদ্যপণ্যের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। একটি পরিবারের মাসিক ব্যয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই যায় খাবার কেনার পেছনে। তাই খাদ্যদ্রব্যের দাম না কমলে পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতি কমলেও সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক মাস ধরে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ব্যাংক ঋণের প্রবাহ সীমিত হওয়ায় বাজারে অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ কমেছে। ফলে ভোগ ব্যয়ও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম কিছুটা কমেছে। এতে পরিবহন খরচ ও উৎপাদন ব্যয় কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে খাদ্য বহির্ভূত খাতে। ওষুধ, পোশাক ও কিছু ভোগ্যপণ্যে দাম কমেছে। ডলার-টাকার বিনিময় হারও কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীল। এতে আমদানির খরচ হঠাৎ করে বেড়ে যায়নি।
কিন্তু ভোক্তাদের জন্য এই পরিসংখ্যান কেবল কাগজে-কলমে স্বস্তি। আসল সমস্যা রয়ে গেছে বাজারে। প্রতিদিনের বাজারে গিয়ে মানুষ বুঝতে পারছে না কিসে হাত দেবেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আসছে উৎসব মৌসুমে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। যদি সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়, তবে দাম আরো বাড়তে পারে। তখন সামগ্রিক ইনফ্লেশনও আবার উল্টোদিকে ঘুরে যেতে পারে।
তাঁদের মতে, সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ। একই সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি ও আয় বাড়াতে না পারলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরো সংকুচিত হবে।
প্রদা/ডিও