সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দুইটা পর্যন্ত দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। পরে তাদের সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। দুই পক্ষের ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ।
দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে গতকাল সন্ধ্যা সাতটা থেকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দিবাগত রাত দুইটার পর সড়ক থেকে দুই পক্ষের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ায় যান চলাচল শুরু হয়।
সংঘাত এড়াতে গতকাল রাত ১০টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মুবিন ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দেন। আজ রোববার বেলা তিনটা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিকেল চারটায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুটি পক্ষকে নিয়ে প্রশাসনের বৈঠকের কথা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জশনে জুলুসে যাওয়া গাড়িবহরের এক যুবক হাটহাজারী বড় মসজিদ লক্ষ করে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও কওমি লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। পরে ফটিকছড়ি থানা-পুলিশ ওই যুবককে আটক করে।
সন্ধ্যার পর দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ঢিল-ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও কওমি লোকজন হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আহমেদ দিদার কাসেমী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে মাদ্রাসায় ঢুকে যেতে বলেন। এরপর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও কওমি লোকজন মাদ্রাসার সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে সুন্নি জনতা অবস্থান নেন হাটহাজারীর কাচারি সড়কে। উভয় পক্ষ টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ও ঢিল-ছোড়াছুড়িতে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১২৭ জনকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। গতকাল রাত দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, হাসপাতালে ১০৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্র জানায়, রাত ১১টার দিকে প্রশাসন দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে সুন্নি জনতার পক্ষ থেকে আটক যুবককে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে কওমি লোকজন দাবি করেন, আটক যুবকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবসা নিতে হবে। তবে এ বিষয়ে সুরাহার জন্য আজ রোববার আবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সড়ক থেকে সরে যেতে রাজি হয় দুই পক্ষ।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইটপাটকেল ও কাচ। রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। হাটহাজারী থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি যাওয়ার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে
প্রদা/ডিও