বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেছিলেন—আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ কোনটি? আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আরো ভালো পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু কী চাই এবং কীভাবে চাই—এটি পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে হয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাব আমাদের বাণিজ্য আলোচনার জন্য অন্যতম বড় সমস্যা। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য খুব সীমিত। এছাড়া পর্যাপ্ত উৎপাদন সক্ষমতা বা কাঁচামালও নেই। বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি করে সামান্য মূল্য সংযোজন করে আমরা তা বিক্রি করি। এজন্য ‘রুলস অব অরিজিন’ বা উৎপত্তি সম্পর্কিত নিয়মগুলো আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আজ (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাণিজ্য আলোচনায় জাতীয় সক্ষমতা: প্রতিফলন ও অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এসব বলেন। অনুষ্ঠানটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে আয়োজন করে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেছিলেন—আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ কোনটি? আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আরো ভালো পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু কী চাই এবং কীভাবে চাই—এটি পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা প্রতিবছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলারের খাদ্যশস্য আমদানি করি। যদিও আগের সরকার ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। বাস্তবে আমরা এখনো খাদ্যের পেছনে অনেক ব্যয় করি। তাছাড়া আমাদের জ্বালানির চাহিদার বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। অতএব, খাদ্য ও জ্বালানি—এই দুই মৌলিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই আমরা আমাদের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করি। যেকোনো আলোচনায় প্রবেশ করার সময় এই মৌলিক বিষয়গুলো ঘিরেই কৌশল তৈরি করতে হয়।
ভবিষ্যতের বাণিজ্য আলোচনা বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দীন।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা চাপের মুখে। সুরক্ষাবাদ বাড়ছে। আমরা সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে যেতে দেখেছি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতিও পুনর্বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য, এলডিসি থেকে উত্তরণ অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। বৈশ্বিক বাজারে আরো কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। বাণিজ্য শুল্কের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, অর্থনীতিকে আরো উন্মুক্ত করতে হবে। আপনাদের বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, বিশ্বজুড়ে অংশীদারদের সঙ্গে বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানি, বাণিজ্যনীতি জটিল এবং আলোচনা কঠিন। এটি রাজনৈতিক, এটি টেকনিক্যাল। বাংলাদেশকে সফল হতে হলে প্রয়োজন হবে তীক্ষ্ণ মেধা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং একটি সুস্পষ্ট কৌশল। আপনাদের অবশ্যই বুঝতে হবে নিজেদের স্বার্থ কী এবং বাণিজ্য অংশীদারদের স্বার্থ কী?
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট তানভীর মাহমুদ। ‘বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ শীর্ষক সেশনে বক্তৃতা করেন, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিক উপদেষ্টা ওয়াইস প্যারে, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট-র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি শাখা) আবদুর রহিম খান।
প্রদা/ডিও