দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্ত হচ্ছে, সমীক্ষা শেষ হয়েছে। সরকার মহাসড়কটি বর্তমান চার লেন থেকে ১০ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই ব্যয় মেটাতে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ও বহুজাতিক সংস্থার তহবিল ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে সরকার।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। ২০১৯ সালে এ মহাসড়কে দৈনিক গাড়ি চলাচলের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৪৮২, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫০১। যানবাহনের চাপ মোকাবিলায় এ উন্নয়ন প্রকল্পকে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের তৈরি করা আগের হিসাব অনুযায়ী ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। নতুন পরিকল্পনায় ব্যয় কিছুটা কম হলেও মহাসড়কের গুরুত্বের কারণে এতে অনেক নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত হওয়ায় ব্যয় এখনো অনেক বেশি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নকশা অনুযায়ী জানা গেছে, মূলত মহাসড়কটি ছয় লেনের হবে। দুই পাশে দুই লেন করে চার লেনের সার্ভিস লেন হবে। মোট ১০ লেন সড়কের মধ্যে চার লেন থাকবে ডেডিকেটেড। এই চার লেনে সরাসরি ঢাকা থেকে ওঠে সরাসরি চট্টগ্রামে নামবে। কোথাও গাড়ি দাঁড়াবে না। এ চার লেনের দুই পাশে ব্যারিয়ার দেওয়া থাকবে। এই চার লেন ব্যবহার করবে মূল ট্রাফিক। যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার সড়ক ঘিরেই এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে।
ছয়টি জেলা এই মহাসড়কের সাথে সম্পৃক্ত হবে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম এই ছয় জেলা মহাসড়কটির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। এর মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ৩৮ কিলোমিটার, কুমিল্লা ও ফেনীর ১২৫ কিলোমিটার, ফেনী থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ৬৯ কিলোমিটার সড়ক ১০ লেন হবে। এর মধ্যে যেসব এলাকায় যানজট তৈরি হতে পারে সেখানে ওভারপাস করা হবে।
সোজা করা হবে সড়কটি বাঁকা অংশও। নির্মাণ-পরবর্তী ১৫ বছর যেন এই মহাসড়কে আর কোনো কাজ করতে না হয়, সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সওজ।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর প্রবেশদ্বার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুরুতেই সীতাকুন্ড উপজেলা। এ মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীতকরণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের বাসিন্দারা। তাই ‘সীতাকু- নাগরিক সমাজ’ এর ব্যানারে সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা তিনটি বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, মহাসড়ক হবে ছয় লেনের অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে অর্থাৎ শুল্ক পরিশোধ করে এই মহাসড়ক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি দুই পাশে দুই লেনের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হবে, যাতে সব ধরনের যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া মহাসড়কে ছয়টি মাল্টি-লেভেল উড়াল ক্রসিং এবং ২০টিরও বেশি উড়াল সার্ভিস ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাখা হবে তিন মিটার প্রশস্ত জরুরি লেন এবং আধুনিক মাল্টি-লেয়ার ইন্টারচেঞ্জ।
প্রদা/ডিও