ভোক্তা চাহিদা বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক-চাপ মোকাবিলা করতে বড় ধরনের কর ছাড় দিল ভারত।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) কাঠামো সহজ করে এখন থেকে দুটি হার বহাল থাকবে—৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ। তবে সিগারেটের মতো ‘ক্ষতিকর ও বিলাসপণ্য’-এর ওপর থাকবে ৪০ শতাংশ কর।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এ করহার কার্যকর হবে।
জিএসটি হার ২৮ থেকে ১৮ শতাংশে নেমে আসায়: ছোট গাড়ি, ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল, বড় টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার (এসি), ওয়াশিং মেশিন এবং সিমেন্টের মতো পণ্যের দাম কমবে।
সেপ্টেম্বরে ভারতে উৎসব মৌসুম থাকে। এসময় ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির কেনাবেচা হু হু করে বাড়ে। তাই কর ছাড়ের ফলে এসব খাতে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
হেয়ার অয়েল, সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্টের মতো প্রসাধন সামগ্রী এবং কফি, মাখন, ঘি, পাস্তা ও নুডলসের মতো খাদ্যপণ্যের করও ১৮ ও ১২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এছাড়া পনির, ছানা, প্যাকেটজাত রুটিসহ জীবন রক্ষাকারী ৩৩টি ওষুধকে জিএসটির আওতামুক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে জীবন ও স্বাস্থ্য বীমায়, যেখান থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে তামাকজাতীয় ও বিলাসবহুল পণ্য হবে আরও দামী। এসবের ওপর ৪০ শতাংশ কর বসানো হয়েছে।
ভারতের নতুন করের ঘোষণার পরপরই শেয়ারবাজারে বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে সরকারের বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে।
এর আগে চলতি বছরের বাজেটে আয়করে ১২০০ কোটি ডলারের ছাড় দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ঋণের সুদহার কমিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ছাড় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের বিরূপ প্রভাবও সামাল দিতে সহায়ক হতে পারে। ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন—এর মধ্যে ২৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক ও ২৫ শতাংশ জরিমানা। তিনি সতর্ক করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে কেনাকাটা বন্ধ না করলে ‘অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।
২০১৭ সালে ভারতে চালু হওয়া জিএসটি নানা ধরনের করপদ্ধতি একীভূত করলেও জটিল কাঠামো ও বহু ধাপ থাকার কারণে সমালোচিত ছিল। এবার সরলীকৃত কাঠামোর মাধ্যমে সেই জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ‘বড় কর ছাড়’-এর অঙ্গীকার করেছিলেন। বুধবারের এ ঘোষণা সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘এ সংস্কার কৃষক, মধ্যবিত্ত, নারী ও তরুণদের উপকার করবে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ব্যবসা সহজতর করবে।’
প্রদা/ডিও