চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, যানজট, পানিসংকট, বৃষ্টিপাত, ও নালা-নর্দমা সৃষ্টিতে জনজীবন পড়ছে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে।
চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে পতেঙ্গা, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, চকবাজার সহ বিভিন্ন নিচু এলাকা শিকার হয় জলাবদ্ধতার। ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ততা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা যার কারণে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী কর্মজীবী এবং জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে পড়ায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে, যা জনজীবনকে ফেলছে হুমকির মুখে। ১৯৯৫ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েই গেছে।
পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায়, রাস্তাঘাটে যত্রতত্র নালা-নর্দমা সৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। চট্টগ্রামের নালা-নর্দমাগুলো আবাসিক বর্জ্য, মাটি, পলিথিন ও অন্যান্য আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে, যার ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। মাটি ও পলি জমে নালার গভীরতা কমে যাচ্ছে যার ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। উন্মুক্ত নালা-নর্দমাগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিণত হওয়ায় সেগুলো পথচারী ও শিশুদের জন্য পরিণত হয় মৃত্যুফাঁদে। বৃষ্টির সময় এসব অপররিকল্পিত নালা-নর্দমায় পানি উঠে ভরে যায় যার ফলে জনসাধারণের জীবন হুমকিতে পড়ে।
সিটি কর্পোরেশন (CDA) ও ওয়াসার মতো বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্পের কাজ একই সময়ে চলায় সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি এবং যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে জনসাধারণকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অব্যবস্থাপনার কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শহরের সড়কগুলো যানবাহনের চাপ সামাল দিতে পারছে না এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় সৃষ্টি করছে যানজট । চট্টগ্রাম বন্দর ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জের মতো বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি ও পার্কিংয়ের কারণে নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকে। যার ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধান প্রধান সড়কের মোড়গুলো সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যানজট ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপ লিক করে পানি অপচয় হওয়ায় এবং অন্যান্য কারণে অনেক পরিবার নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের অভাবে ভুগছে। নগরীর হালিশহর, পতেঙ্গা সহ বেশ কিছু জায়গায় মিলছে না ওয়াসার পানি যার প্রভাবে সাধারণ মানুষদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। গত এক দশকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় এখনো পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি ওয়াসা।
অপরদিকে গত এক বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ হচ্ছে না চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারে। প্রতিবছর অন্তত একবার সার্বিক পরিস্থিতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা। কিন্তু সাত বছরে একবারও তা করেনি সিটি করপোরেশন। স্টিল গার্ডার থেকে নাট-বোল্ট খুলে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। ফ্লাইওভারের নিচে সবুজায়নের জন্য তৈরি করা নিরাপত্তা বেষ্টনীও চুরি হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে আছে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারটি।
সিডিএর সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ৮০ হাজার গাড়ি চলাচল করে এই ফ্লাইওভার দিয়ে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইনে প্রতিবছর অন্তত একবার নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। গত মঙ্গলবার দুপুরে ২ নম্বর গেটে ফ্লাইওভারে গিয়ে দেখা যায়, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে জিইসি মোড়ে ওঠানামার লুপ ও র্যাম্পের ২৯টি স্টিল গার্ডারের অনেকগুলো থেকে নাট-বোল্ট খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া নগরের শপিং কমপ্লেক্স থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত স্টিলের তৈরি নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে গেছে। মুরাদপুর অংশের বিভিন্ন এলাকায়ও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। ২ নম্বর গেট ও নাসিরাবাদ এলাকায়ও নিরাপত্তা বেষ্টনী খুলে নেওয়া হয়েছে। পরিচর্যার অভাবে ফ্লাইওভারের নিচে সড়ক বিভাজকে লাগানো গাছগুলো মরে যাচ্ছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে শত শত বাতির পোল। এসব স্থানে মাদকসেবী ও ভাসমান লোকজনের ভিড় থাকে। ফ্লাইওভারের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক বাতিগুলো খুলে নিয়ে গেছে। ফ্লাইওভারে জমে আছে ময়লা, আটকে আছে বৃষ্টির পানি।
প্রদা/ডিও