উচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হলেও জুলাইয়ে খরচ কমাননি মার্কিন ভোক্তারা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেতারা টেকসই পণ্যে খরচ বাড়ালেও শুল্কের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিলাসদ্রব্য ক্রয় থেকে সরে আসছেন। খবর সিএনএন।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘পারসোনাল ইনকাম অ্যান্ড আউটলেজ’ প্রতিবেদন অনুসারে, জুনের তুলনায় জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। এটি পূর্বাভাসকৃত দশমিক ৬ শতাংশ থেকে সামান্য কম হলেও জুনের তুলনায় বেশি।
গ্রীষ্মকালীন ছাড় ও স্কুল খোলার আগে কেনাকাটার মৌসুম হিসেবে পরিচিত জুলাই। এছাড়া থাকে অ্যামাজনের প্রাইম ডের মতো বড় ইভেন্ট। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই মাসে ব্যয় বৃদ্ধির বড় অংশে ভূমিকা রেখেছে গাড়ি ও আর্থিক সেবা খাত।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, জুলাইয়ে মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে দশমিক ৪, যা জুনের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ বেশি। এটি মূলত মজুরি বৃদ্ধির প্রতিফলন। সঞ্চয়ের হার স্থির ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশে।
মূল্যস্ফীতি ধরা হলে জুলাইয়ে মার্কিন ভোক্তাদের প্রকৃত ব্যয় বেড়েছে দশমিক ৩, যা জুনের দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ফোর্ডবন্ডসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিস রুপকি বলছেন, ভোক্তা ব্যয় এখনো মজবুত। পণ্যের মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। কারণ শুল্কযুদ্ধ অর্থনীতিকে খুব একটা ধীরগতি করতে পারেনি বা বাজারকে শঙ্কিত করার মতো বড় ধরনের মূল্যস্ফীতিও তৈরি হয়নি।
জুলাইয়ে পিসিই সূচক বা ব্যক্তিগত ভোক্তা ব্যয়ের মূল্যসূচক দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ফলে বার্ষিক হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্য ও জ্বালানি বাদে কোর পিসিই সূচক বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। জুনে এ সূচক একই হারে বেড়েছিল। তবে বার্ষিক হারে এটি ২ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদার লং বলেন, ‘মার্কিন ভোক্তারা এখনো সুযোগ পেলেই খরচ করতে চাইছেন, এটি বেশ ইতিবাচক। মার্চের পর জুলাইই প্রথম মাস যখন আয়ের চেয়ে মাসিক ব্যয় বেশি।’
জুলাইয়ে মার্কিন ভোক্তারা গাড়ি কেনার সঙ্গে আসবাব, গৃহস্থালি সরঞ্জাম ও বিনোদন পণ্যে প্রকৃত ব্যয় বাড়িয়েছে। টেকসই পণ্যের খাতে জুলাইয়ে ব্যয় বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
তবে টেকসই পণ্যে খরচ বাড়লেও শুল্কের প্রভাবে মানুষ ধীরে ধীরে বিলাসী ব্যয় থেকে সরে আসছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিনোদন খাতে খরচ কমেছে। শুল্কের আসল চাপ আগামী ছয় মাসে পুরোপুরি উন্মোচন হবে বলে মনে করেন হিদার লং। তার মতে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাজেটে বাড়তি খরচ সামলানোর জায়গা নেই। সামনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও চাকরির বাজারে চাপ বাড়বে।
উচ্চ খরচ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় সংকোচনে বাধ্য করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। তার মতে, ফেডারেল রিজার্ভের উচিত সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে সুদহার কমানো।
প্রদা/ডিও