দেশের পুঁজিবাজারে তিন মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ সময়ে সূচকে প্রায় এক হাজার পয়েন্ট যোগ হয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে।
দেশের পুঁজিবাজারে তিন মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ সময়ে সূচকে প্রায় এক হাজার পয়েন্ট যোগ হয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ বছরের মধ্যে টাকার অংকে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। এদিন ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সূচক বাড়লেও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
ডিএসইতে গতকাল ১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২০১টির, কমেছে ১৪১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৬টির বাজারদর।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ার কেনার চাপে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে ছিল সূচক। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্ট। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২ হাজার ১৫৭ পয়েন্ট। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস এদিন ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ২০৭ পয়েন্ট। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেনাটার শেয়ার।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে চলমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ার কারণে পুঁজিবাজারে তাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্টতা আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। ইতিবাচক রিটার্নের প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা বাজারের ঊর্ধ্বমুখিতাকে অনুসরণ করছেন, যার প্রভাবে গতকালও লেনদেনের পুরো সময়জুড়েই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল, যার কারণে কয়েকদিন ধরে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে বস্ত্র খাত। ১০ দশমিক ৫ শতাংশ লেনদেন নিয়ে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। প্রকৌশল খাত ৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ স্থানে ছিল। পঞ্চম অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
গতকাল ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে প্রকৌশল খাতে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩ দশমিক ৪, সিরামিক খাতে ৩ দশমিক ১, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ২ দশমিক ২ এবং টেলিযোগাযোগ খাতে ২ দশমিক ১ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন ছিল। অন্যদিকে গতকাল মিউচুয়াল ফান্ডে দশমিক ৭ ও পাট খাতে দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
সিএসইর নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ১৪০ পয়েন্ট বেড়ে ৯ হাজার ৫৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই এদিন ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৫৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৬০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬০টির, কমেছে ৭০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
প্রদা/ডিও