দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে অহরহ। পাশাপাশি রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছেন না স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে অহরহ। পাশাপাশি রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছেন না স্থানীয় উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, সবকিছুর কোনো টেকসই সমাধান হবে এমন উচ্চাশা না থাকলেও বিনিয়োগের জন্য তারা নির্বাচনের দিকেই তাকিয়ে আছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন হতে এখনো প্রায় ছয় মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটার কোনো আশা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দাবির প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানেও। গতকাল প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস অনুযায়ী, গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণ ছিল গত সাত প্রান্তিকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ আবারো হ্রাস পায়। এ প্রান্তিকে মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয় প্রায় ২৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। উল্লেখ করা যায় যে এ সময় পর্বে দেশে জুলাই অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক অস্থিরতা ছিল। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ আবারো বেড়ে হয় ৩৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ ঋণ প্রবৃদ্ধি স্থায়ী হয়নি। এ বছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় বিতরণকৃত মেয়াদি ঋণ ৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায়। এর পরের প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ আরো অনেক কমে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এরপর অক্টোবর-ডিসেম্বরে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৭৬৩ কোটির টাকায়। কিন্তু এরপর জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণে পতন ঘটে। ওই প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ হয় ২২ হাজার ১৫ কোটি টাকা। যদিও এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ অর্থাৎ এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ বেড়ে হয় ২৪ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা।
দেশের অন্যতম পুঁজি ও শ্রমঘন বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি পোশাকের কাঁচামাল সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী বস্ত্র খাত। এ খাতে বিনিয়োগ ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে দাবি খাতসংশ্লিষ্টদের। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এ খাতের প্রতিনিধিরা।
দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ধারায় সিমেন্টের চাহিদাও ক্রমাগতভাবে বেড়েছিল। বিভিন্ন কোম্পানি উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাতের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছিল। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে সিমেন্টের চাহিদা প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এরকম সম্প্রসারণশীল খাতেও নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ের মতো সংকট তারা দেখেননি। বিগত সরকারের আমলের শেষ দিকে উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর থেকে ক্রমাগতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিসর কমতে থাকে। আর দেশে তখন নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। নতুন বিনিয়োগও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে বিগত সরকারের আমলে কিছু গোষ্ঠী লুটপাট করে ব্যাংক খালি করে দিয়েছে। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থাও ছিল না। উল্টো স্টিল খাতে ছোটখাটো প্রায় ১০-১২টা মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দেশে শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এর প্রতিফলন হিসেবে মূলধনি যন্ত্র আমদানি কমে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করছেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মূলধনি যন্ত্র আমদানিতে ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি।
প্রদা/ডিও