দূরপাল্লার বাসের ড্রাইভার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তার একমাত্র সন্তান মোহাম্মদ যুবায়ের জুলাই আন্দোলনের আহত যোদ্ধা।
প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলাম, দেশের অর্থনীতির হালচাল কী বুঝছেন? জাহাঙ্গীর বললেন, “এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিকে ব্যাংকে নিজের একাউন্টের টাকা তুলতে গেলে অফিসার বলতো, ব্যাংকে টাকা নাই, কয়েকদিন ঘুরিয়ে অল্প অল্প টাকা দিত। অনেক কষ্টে নিজের জমানো টাকা হাতে পাব কি না, তা নিয়ে ভয়ই পেয়েছিলাম। এখন ব্যাংক টাকা নাই বলছে না। ” জানতে চাইলাম, জিনিসপত্রের দাম কেমন দেখছেন? উত্তরে তিনি বললেন, “এবারের রমজানে জিনিসপত্রের দাম তো কমই ছিল। এখন আবার বাড়তির দিকে। ”
এরপর কথা বললাম কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিন্টুর সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করলাম, ডলার বাজার কেমন? হেসে বললেন, “মার্কিন ডলারের দাম তো এখন বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১৫ মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বাণিজ্যিক ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করছে, ডলারের দামের একটি ভিত্তি মূল্য ঠিক করে দিচ্ছে। ফলে আওয়ামী সরকারের আমলে ২০২১ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া ডলার সংকট ২০২২ ও ২০২৩ সালে আরও প্রকট হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত কমবেশি করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে বাজার স্বাভাবিক হয়েছে। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করায় মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। ”
ব্যাংকার তানভীর হাসনাইন মঈনের কাছে জানতে চাইলাম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসীদের পাঠানো টাকা বা রেমিট্যান্স এবং আমদানি রপ্তানির কথা। বললেন, “বর্তমান সরকারের এই এক বছরে ব্যাংক খাতে সংস্কার হয়েছে বেশ ভালোভাবেই। প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স আগের বছরের চেয়ে বাড়ার যে ধারা, তা অব্যাহত রয়েছে। রপ্তানি আয়ও প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মুখ থুবরে পড়েছিল যে রিজার্ভ, তার ক্ষয় বন্ধ হয়েছে, এখন বাড়ছে। ”
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়। ২০২৫ সালের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার বর্ষপূর্তি হলো। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি ১০ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকে উন্নতি হয়েছে। গত সরকারের আমলে ডলারের যে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল, তা আয়ত্তের মধ্যে এসেছে। রিজার্ভ সংকট কেটেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বেড়েছে। অর্থাৎ এক বছর আগে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে নাজুক পরিস্থিতি ছিল, সেটি কেটে গেছে। তবে মূল্যস্ফীতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। রাজস্ব আহরণও বাড়েনি। বিনিয়োগ খরা কাটেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিনিয়োগ না বাড়ায় থমকে আছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ। অর্থাৎ অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলোর দুর্বলতা থেকে গেছে।
প্রদা/ডিও