চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তীতে যে সরকার এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এসেছে তাদের কর্মকাণ্ড অতীতের ১৫ বছরের চাইতে দ্রুত শেয়ারবাজারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিসিএমআইএ’র সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিলিস্টিং (তালিকাচ্যুত) করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন ডিলিস্টিং আমরা চাই না। আমরা এটা হতে দেবো না। যদি ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা না হয়, আমরা জীবন দিয়ে দেবো, তবু এই ডিলিস্টিং হতে দেবো না। অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে ডিলিস্টিং করতে হবে।
এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজার রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তাদের ভূমিকা আজ বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ এবং আমাদের জন্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ২০১০ সাল থেকে আমরা পুঁজিবাজারে শোষণ-নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আমরা আশা করেছিলাম যে বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে, তারা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ৫ আগস্ট পরবর্তীতে যে সরকার এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এসেছে, তাদের কর্মকাণ্ড অতীতের ১৫ বছরের চাইতে দ্রুত শেয়ারবাজারকে ধ্বংসের মুখে, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
বিসিএমআইএ’র সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে যে, এই পুঁজিবাজার ধ্বংসের জন্যই যেন এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন দেখেছি। কিন্তু আমরা বলতে পারি পুঁজিবাজারে নব্য স্বৈরাচারের উত্থান ঘটেছে। এই পুঁজিবাজারে রাশেদ মাকসুদ (বিএসইসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান) কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের বিনিয়োগকারীর প্রত্যেক পোর্টফোলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উনি (বিএসইসি চেয়ারম্যান) দায়িত্ব নেওয়ার পর কী করেছেন? এই প্রশ্নটা কেন আমরা জাতিগতভাবে আমরা করি না? আমাকে অনেকেই বলে যে আপনি এত বড় বড় কথা বলেন কোন সাহসে? সাহস একটা সত্য কথা বলি’।
তিনি বলেন, লেনদেন শুরুর পর যদি সিকিউরিটির দাম কমে যায় লাল হয়ে যায়, আর দাম বেড়ে গেলে সবুজ। কিছুই যে জানে না, এটুকু তো সে বুঝে। আমার মনে হয় রাশেদ মাকসুদ সেটাও বোঝেন না। রাশেদ মাকসুদ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান উনি সেটাও বোঝেন না। এমন একটা লোককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর তার পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে অর্থ উপদেষ্টা সালাউদ্দিন আহমেদ। এই অর্থ উপদেষ্টার পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এই শেয়ারবাজার ধ্বংসের মুখে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে না, ধ্বংসের শেষ হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা আত্মহত্যা থেকে শুরু করে তারা পাগল প্রায় হয়ে গেছেন। তারপরও কোনো পরিবর্তন
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবির মুখে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজার বিষয়ে একটা মিটিং করেছেন। আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেখানে আমরা যার অপসারণ চাই, যার কারণে পুঁজিবাজার ধ্বংস হয়ে গেলো সেই রাশেদ মাকসুদ, তিনি ছিলেন সেখানকার উপস্থাপক এবং তিনি ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।
বিসিএমআইএ’র সভাপতি বলেন, সব বাদ দিলাম, যখন প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে ঘোষণা আসলো ওই মিটিং থেকে যে ‘এ গ্রুপ অব এক্সপার্ট’ দিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারের বিষয়গুলো সংস্কার করা হবে। কয় মাস হয়েছে, কত দিন হয়েছে? আমরা যমুনার সেই মিটিংয়ের খবর জানি। কোথায় সেই এক্সপার্ট? এক্সপার্ট আসলে তো রাশেদ মাকসুদের অপসারণ হওয়া উচিত ছিলো। তাকে দিয়ে হচ্ছে না যখন, বিদেশি আনবো আমরা। সেই বিদেশিরা কই? কি এক্সপার্ট এনেছে। কি উন্নতি করেছে পুঁজিবাজারের? এগুলো আমাদের জানার প্রয়োজন আছে। কিছুই হয় না। প্রধান উপদেষ্টার কথা যখন হয় না, তখন কার কথা কার্যকরী হবে?
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা কি প্রতিদিন তাদের জীবন দিয়ে শেষ হয়ে যাবে? নতুন করে কোনো কাজ নেই, কোনো উন্নয়ন নেই। আপনারা সবাই জানেন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হলে উনি বলেন- শেয়ারের দাম বাড়ানো বা কমানো তার কাজ না। ইন্ডেক্স বাড়ানো বা কমানো তার কাজ নয়। তাহলে একটা শেয়ার সাত দিন পরপর হল্ট হতে থাকলে কোয়ারি দেয় কেন? আবার কোনো শেয়ারের কোয়ারি দেয় না। নিশ্চয় বাড়লে পরে তার কোয়ারি দেওয়ার একটা দায়িত্ব আছে? সেটা বোঝার দায়িত্ব আছে। কারা অনিয়ম, দুর্নীতি করতেছে নিশ্চয়ই তাদের ধরার দায়িত্ব আছে। উনি এক কথায় বলে দিলেন ইন্ডেক্স বাড়লেও তার কিছু যায় আসে না, কমলেও যায় আসে না। তিনি কিসের জন্য এখানে আছেন? এটা তো আমাদের জানার, বলার অধিকার আছে।
বিসিএমআইএ’র সভাপতি বলেন, ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, যিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার (মমিনুল ইসলাম) নিয়োগ অবৈধ। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি তিনি ঋণ খেলাপি, একজন জামিনদার হিসেবে ঋণ খেলাপি বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে। তাকে দিয়ে দুই বন্ধু কৌশলে কিছু কোম্পানি ডিলিস্টিং করবে। ডিলিস্টিং করবে করা, যারা এই কোম্পানির শেয়ার ধরে আছে।
তিনি আরও বলেন, সিলেট থেকে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী কাল রাত ১টার সময় আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, একটি ফিন্যান্স কোম্পানির শেয়ার তার বাবা কিনেছিলেন ৮ বছর আগে। বাবা মারা গেছে। এটাই তার সম্বল। সে এটা নিয়েই আছেন, ডিলিস্টিংয়ের বিষয়ে সেই কোম্পানির নাম বলেছেন মমিনুল ইসলাম।
প্রদা/ডিও