আইপিসি জানায়, গাজায় মানুষ ‘ক্ষুধা, পুষ্টিহীনতা ও মৃত্যুর’ মধ্যে আছে। দুর্ভিক্ষ চিহ্নিত করার তিনটি সূচকের মধ্যে দুটি—ক্ষুধা ও শিশু অপুষ্টি অতিক্রম করেছে গাজা।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে। জাতিসংঘের সমর্থনে পরিচালিত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) গাজা নগরীতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। আইপিসির মতে, গাজার মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার। এই পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই অবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো সরাসরি ইসরায়েলের ‘পদ্ধতিগত বাধা’ নীতিকে দায়ী করছে। খবর বিবিসি।
আইপিসি জানায়, গাজায় মানুষ ‘ক্ষুধা, পুষ্টিহীনতা ও মৃত্যুর’ মধ্যে আছে। দুর্ভিক্ষ চিহ্নিত করার তিনটি সূচকের মধ্যে দুটি—ক্ষুধা ও শিশু অপুষ্টি অতিক্রম করেছে গাজা। মৃত্যু সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, দুর্ভিক্ষের তৃতীয় সূচকও পূর্ণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৭৩ জনের মধ্যে ১১২ শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করে বলেন, যদি খাদ্য সংকট থেকে থাকে তবে তার জন্য হামাস ও ত্রাণ সংস্থাগুলো দায়ী। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেনা সংস্থা কোগ্যাট আইপিসির প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে এটিকে ‘হামাসের মিথ্যা প্রচারণার’ অংশ বলে দাবি করেছে।
ইসরায়েলের নীতি এবং সংকট সৃষ্টিতে গাজায় খাদ্যাভাব নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েল এই অঞ্চলে পণ্য প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এই বিধিনিষেধ আরো কঠোর হয় এবং মার্চ ২০২৫ থেকে প্রায় তিন মাস গাজায় খাদ্য সহায়তা প্রবেশে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করা হয়।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল মে মাসের শেষ দিকে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বিতরণ ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করে, যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে বিতর্কিত আমেরিকান সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’। এই নতুন ব্যবস্থায় খাদ্য বিতরণের কেন্দ্রগুলোকে কয়েকটি সামরিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে ত্রাণ নিতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ ধরনের ঘটনায় অন্তত ৯৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েল কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করেছে এবং প্রতিদিন কিছু ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন, যার অর্ধেকও এখন ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েল গাজা নগরীতে সামরিক আগ্রাসন ও দখলের জন্য হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা তলবের অনুমোদন দিয়েছে। আইপিসি যেখানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে, সেখানেই এই অভিযান চালানো হবে। এই আগ্রাসনের ফলে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, এই আগ্রাসন দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায় আরো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে, যেখানে বহু অসুস্থ ও পুষ্টিহীন মানুষ পালানোর সুযোগ পাবে না।