বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই হবে আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এতে শুধু সামষ্টিক অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না, বরং আর্থিক লেনদেনে নতুনত্ব এনে সব শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে করপোরেট খাত, ব্যাংকিং, নীতিনির্ধারণ ও উদ্ভাবন জগতের শীর্ষ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ব্যবসায়িক খাতের ভূমিকা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
গভর্নর বলেন, নগদ লেনদেন দুর্নীতি উৎসাহিত করে এবং কর ফাঁকির বড় মাধ্যম। এ প্রবণতা রোধ করতে হবে। বাংলাদেশের ক্যাশলেস সোসাইটির ভিত্তি ইতোমধ্যে শক্তিশালী হচ্ছে। আগামী ৭-৮ বছরে বাংলাদেশ ক্যাশলেস ইকোনমির একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠবে, বলেন তিনি।
গভর্নর আরও বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণের (ন্যানো লোন) ধারণা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মানুষ এই সেবা পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা এভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের জন্য আগের ধাঁচের অর্থনৈতিক কৌশলে আটকে থাকা আর সম্ভব নয়। আমাদের রাজস্ব আহরণের পুরোনো পদ্ধতি বদলাতে হবে। উন্নয়ন বাজেটের বড় অংশ এখনো বিদেশি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে নতুন উপায় বের করার সুযোগ আছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের পক্ষে বিদেশি অর্থায়ন আনার সুযোগ অনেক। উন্নয়ন খাতে ঘাটতি পূরণে এ সুযোগ বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাম দাস বলেন, যখন দৃঢ় বিশ্বাসে পুঁজি গড়ে ওঠে, ঐতিহ্য প্রযুক্তির সঙ্গে মেশে, আর লক্ষ্য থাকে বাজার সম্প্রসারণের, তখন তা শুধু উন্নয়ন নয়, সমাজে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে। আলোচকরা পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন (গ্রিন ফাইন্যান্স), ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান এবং কৃষি খাতের উন্নয়ন নিয়ে মতবিনিময় করেন।
মূল আলোচনায় উঠে আসে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির প্রচলিত ধারণাকে বদলে জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে মূলধারার ব্যবসায়িক কৌশলকে সমন্বয় করার আহ্বান।
সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও নগদ লেনদেন নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সেবা সম্প্রসারণ এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণই বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক যাত্রাকে আরও গতিশীল করবে।
প্রদা/ডিও