মধুমাস (জ্যৈষ্ঠ) শেষ হয়েছে দুই মাস আগে। তবে বাজারে এখনো মিলছে আম। সরবরাহ খুব বেশি না থাকলেও মৌসুম শেষেও যা পাওয়া যাচ্ছে সেটিকে পর্যাপ্ত বলা চলে। যদিও আমের দাম এখন কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি।
সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ও ফলমূলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পাড়া-মহল্লার ফলের দোকানে আম বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারগুলোতেও চলছে কারবার। আশ্বিনা, গৌড়মতি, কাটিমনসহ আরও বেশ কিছু জাতের আমের সরবরাহ রয়েছে বাজারে। তবে দাম কিছুটা বেশি। খুচরায় এখন প্রতি কেজি আম কিনতে হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকায়।
বাংলাদেশে আমের ভরা মৌসুম ধরা হয় জুন থেকে জুলাই (জ্যৈষ্ঠ মাসের কিছু আগে থেকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি) পর্যন্ত সময়কে। কিন্তু এখন বাজারে মে থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস আমের মৌসুম থাকছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও আম্রপালি আম সরবরাহ শেষ হওয়ার পর বাজারে সেভাবে আমের দেখা মিলতো না। এখন ভাদ্রেও মিলছে আম।
বাংলাদেশে আমের মৌসুমকে এখন তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। আগাম জাত, মধ্য মৌসুমি জাত ও নাবি জাত। মে মাসের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি পাকে আগাম জাতের আম। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বৃন্দাবনি, গুলাবখাশ, রানীপছন্দ, হিমসাগর, খিরসাপাত ও বারি-১।
জুনের মাঝামাঝি থেকে পাকতে শুরু করে মধ্য মৌসুমি আম। যার মধ্যে রয়েছে—ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙ্গা, লক্ষণভোগ, খুদিক্ষীরশা, বারি-২, বোম্বাই ও সূর্যপুরী জাতের আম।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাকে নাবি জাতের আম। এর মধ্যে রয়েছে—ফজলি, আম্রপালি, মোহনভোগ, আশ্বিনা, গৌড়মতি, বারি-৩ ও বারি-৪।
একসময় বাংলাদেশে নাবি জাতের আমের উৎপাদন কম হলেও এখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তা বেড়েছে, যা আমের মৌসুমকে দীর্ঘ করেছে।
দীর্ঘদিন দেশের আম নিয়ে কাজ করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে’র প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুন ও জুলাইয়ে আমের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। তবে এখন আমের মৌসুম চলে আগস্ট মাস পর্যন্ত। এসময়ও সরবরাহ বেশ ভালো। সব মিলিয়ে এখন পাঁচ মাসের দীর্ঘ আম মৌসুমের পুরোটা সময় বাজারে বাহারি আমের দেখা মেলে।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত আমের মধ্যে বাণিজ্যিকভিত্তিতে বাজারে আসে প্রায় ৩০ জাতের আম। এরমধ্যে উন্নত জাতের আম রয়েছে অর্ধেক, যেগুলো জনপ্রিয় ও উৎপাদনও বেশি হয়। তবে এখন প্রায় ২০ জাতের আম বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল, যা মৌসুমজুড়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যায়।
এ বছর দেশে কী পরিমাণ আম উৎপাদন হয়েছে তার চূড়ান্ত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে চলতি মৌসুমে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭ লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত মৌসুমে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ২৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৩ টন।
বর্তমানে আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের সুস্বাদু আম বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয়। এ বছর চার হাজার টন আম রপ্তানির কার্যক্রম চলছে। প্রধানত ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং কানাডার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হয়।
প্রদা/ডিও