খেলাপি ঋণ কম দেখাতে দেশের ব্যাংকগুলো ঝুঁকছে পুনঃতফসিলের দিকে। এখন চাইলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারে।
নীতির এই ছাড়ের সুযোগে ব্যাংকখাতে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই পুনঃতফসিল করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার ঋণ। এতে বছর শেষে পুনঃতফসিল ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল দুই লাখ ৮৮ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’-এ তথ্য উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত ডাউনপেমেন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ চারবার ঋণ পুনঃতফসিল করা যায়। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২২ সালে নীতিমালায় বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হয়। আগে যেখানে ১০–৩০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হতো, তা নামিয়ে আনা হয় মাত্র আড়াই–সাড়ে চার শতাংশে। সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর আরও বিশেষ সুবিধা যোগ হয়েছে।
নতুন ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ পরিশোধে ৫ থেকে ১৫ বছর সময় দেওয়া হচ্ছে। মাত্র ১ শতাংশ এককালীন জমায় ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ থাকছে, সঙ্গে তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডও দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে এ সুবিধা নিতে ১ হাজার ২৫০টি আবেদন জমা পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে, যার মধ্যে আড়াই শতাধিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে।
যেসব খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, তার বড় একটি অংশ আবারও খেলাপি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে মোট পুনঃতফসিলকৃত ঋণের মধ্যে এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে—যা পুরো পুনঃতফসিল ঋণের ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ছিল ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০২২ সালে হার ছিল ১৯.২০ শতাংশ, ২০২১ সালে ১৯.৫৭ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১৯.২৩ শতাংশ।
২০২০: ১৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা পুনঃতফসিল; ২০২১: ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা; ২০২২: ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; ২০২৩: রেকর্ড ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকা (বিশেষ করে নির্বাচনের আগে ডিসেম্বর প্রান্তিকে); ২০২৪: ৮৫ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল হয়েছে শিল্পখাতে, মোট স্থিতির ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত ১৬.৮৫ শতাংশ, চলতি মূলধন ১১.৩১ শতাংশ, আমদানি খাত ১১.২১ শতাংশ, ব্যবসায়িক খাত ১০.৫৮ শতাংশ, নির্মাণ খাত ৬.৫০ শতাংশ, কৃষি খাত ৪.৬৯ শতাংশ।
প্রদা/ডিও