ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে ইউক্রেনের জন্য ‘কড়া’ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। খবর বিবিসির।
সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিভ উইটকফ বলেন, আলাস্কা সম্মেলনে এ বিষয়ে সম্মতি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইউক্রেনকে কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ–৫–এর মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারবে। ন্যাটোর এই নীতিতে বলা আছে, এক সদস্যের ওপর আক্রমণ মানে সব সদস্যের ওপর আক্রমণ।
পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে যোগদানের বিরোধিতা করে আসছেন। উইটকফ বলেন, ইউক্রেন যদি এ ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, তবে এটি ন্যাটোর বিকল্প হতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসি সফরের আগে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের জন্য যে কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ‘খুবই বাস্তবসম্মত’ হতে হবে—যাতে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সুরক্ষা দেওয়া যায় এবং যাতে ইউরোপের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
এদিকে রোববার ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ একদল দেশ যারা ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—তাদের বৈঠকের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, নেতারা ট্রাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার ‘অঙ্গীকারের’ প্রশংসা করেছেন।
তিনি আরও জানান, নেতারা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে যুদ্ধ শেষ হলে তারা একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য বাহিনী’ মোতায়েন করতে প্রস্তুত এবং ইউক্রেনের আকাশ ও সমুদ্র সুরক্ষিত করতে ও সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।
সোমবার ওয়াশিংটনে জেলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে।
ম্যাখোঁ বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে ট্রাম্প কতটা অগ্রসর হতে প্রস্তুত, সে বিষয়ে তারা তাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আজ আমরা শক্তিশালী না হলে আগামীকাল তার মাশুল গুনতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, তাদের পরিকল্পনা হলো ‘একীভূত অবস্থান উপস্থাপন করা’।
উইটকফ রোববার সিএনএন-কে আরও বলেন, রাশিয়া আলোচনার টেবিলে কিছু ছাড় দিয়েছে এবং দোনেৎস্ক সোমবারের আলোচনার একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ হবে।
এটি এমন এক সময় এসেছে যখন শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্পকে একটি শান্তি প্রস্তাব দেন পুতিন। প্রস্তাবে বলা হয়, ইউক্রেনকে দনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে আসতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনে ফ্রন্টলাইন স্থির করবে।
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প হয়তো জেলেনস্কিকে এসব শর্ত মেনে নিতে চাপ দিতে পারেন।
রাশিয়া দাবি করে দনবাস তাদের ভূখণ্ড। বর্তমানে তারা লুহানস্কের বেশিরভাগ অংশ এবং দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া ২০১৪ সালে রাশিয়া বেআইনিভাবে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে সংযুক্ত করেছিল।
মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার যে কোনো রুশ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি সতর্ক করেন, দনবাস ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি ভবিষ্যতে রাশিয়ার নতুন হামলার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী দেশের ভূখণ্ড পরিবর্তনের জন্য একটি গণভোট আয়োজন করা বাধ্যতামূলক।
সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠকটি হবে ফেব্রুয়ারির পর জেলেনস্কির প্রথম সফর। ওই সময় ওভাল অফিসে তার সঙ্গে ট্রাম্পের প্রকাশ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছিল।
তখন ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য তাকে আরও ‘কৃতজ্ঞ’ হতে হবে এবং অভিযোগ করেন যে তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’।
এরপর জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়।
তবে এপ্রিল মাসে তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় বলে ধারণা করা হয়। হোয়াইট হাউস জানায়, পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার আগে তাদের মধ্যে ১৫ মিনিটের একটি ‘খুব ফলপ্রসূ’ বৈঠক হয়েছিল।
ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি খনিজসম্পদ চুক্তি করেছে, যাতে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক অংশীদারিত্ব পেয়েছে। এছাড়া কিয়েভ স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা মার্কিন অস্ত্রের জন্য অর্থ প্রদান করতে প্রস্তুত।
তবে শুক্রবার ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের পর কিয়েভ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় রাজধানীতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, তিনি বিমানে নেমে লালগালিচায় ট্রাম্পের উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। পরে ট্রাম্প বলেন, তার সঙ্গে পুতিনের একটি ‘চমৎকার সম্পর্ক’ রয়েছে।
প্রদা/দৈঅ