জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, এতে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। জুলাই সনদে সংস্কারের জন্য ৮৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দলগুলোর কাছে ৮টি অঙ্গীকারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাত ৯টায় একাধিক রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
খসড়ার সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ আছে- এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে, এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুষ্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছি বিধায় এই সনদের সকল বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবো এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনও আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
৫ নম্বর অঙ্গীকারে বলা হয়েছে- ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।
৬ নম্বর অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, আমরা ঐকমত্যে স্থির হয়েছি যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষ করে ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
৭ নম্বর অঙ্গীকারে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
এছাড়া, ৮ নম্বর অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, আমরা এই মর্মে একমত, জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ এর যে সকল প্রস্তাব বা সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনও প্রকার কালক্ষেপন না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির যুগ্ম-আহবায়ক জাভেদ রাসিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘আমরা আবারও হতাশ হয়েছি। আমরা যে বাস্তবায়নের কথা বলেছি তার সুনির্দিষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। আবার কিছু বিষয় নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোও চিহ্নিত করা নেই এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কি হবে তা বলা নেই। ফলে সবমিলিয়ে এই খসড়া দেখে আবারও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আশা করি, কমিশন আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসে কনফিউশনগুলো দূর করবে।’
এদিকে জুলাই সনদের খসড়ায় যেসব সুপারিশ উঠে এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে কোনো ব্যক্তি দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না, কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না, সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট।
সনদে সংস্কারের জন্য যে ৮৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১৩টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে সর্বাধিক ৯টি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, গণফোরাম, আমজনতার দল, কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম দলগুলো ও একটি করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।