গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় তিনগুণ প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে কমেছে মূল্যসূচক ও লেনদেন। পাশাপাশি কমেছে বাজার মূলধন। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে টানা নয় সপ্তাহ বড়ার পর ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৯টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭৪টির। এছাড়া ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এর আগে গত ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের পর থেকে শেয়ারবাজারে টানা ৮ সপ্তাহ দরপতন হয়। টানা ৮ সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এসময় প্রধান মূল্যসূচক কমে ৫৮২ পয়েন্ট। টানা ৮ সপ্তাহ পতনের পর ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। সে থেকে টানা ৯ সপ্তাহ বাজার মূলধন বাড়ে। নয় সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৬৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা বাড়ার পর ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা কমলো।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে মূল্যসূচকেরও পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৫৭ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা এক দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৫ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ। তার আগের আট সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৮০৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ২৩ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ। তার আগের আট সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৮৪ পয়েন্ট।
এছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ২ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ শরিয়াহ সূচক টানা তিন সপ্তাহ কমেছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৮৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২২২ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ২১ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, মালেক স্পিনিং, রহিমা ফুড, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং সোনালী পেপার।