আজ ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোড়ের বাড়িতে সপরিবারে নিহত হন তিনি। তার দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি নেই।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়েরা খাতুন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। এসব নেতার সাহচার্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে পরিচালিত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, তার স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামাল ও তার স্ত্রী রোজী জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এবং ছোট ভাই শেখ আবু নাসের প্রাণ হারান। ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা—শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা—দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
সেই রাতেই হামলা চালানো হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শেখ ফজলুল হক মণি এবং আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়। নিহত হন শেখ মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, সেরনিয়াবাত পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য—তার কন্যা বেবী (১৪), পুত্র আরিফ (১২), নাতি বাবু (৪), ভাগনে আবদুল নইম খান রিন্টু, ভাতিজা শহীদ সেরনিয়াবাতসহ তিন অতিথি এবং চারজন গৃহকর্মী।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগ-পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা। পরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ১৩ বছর কারাভোগ করেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যাকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, যার কারণে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে প্রধান আসামি করে আগরতলা মামলা করা হয়; তবে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা সত্ত্বেও তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ধানমন্ডি ১৫ আগস্ট ঘিরে
কড়া নিরাপত্তা : রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় ১৫ আগস্ট কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ এ এলাকায় মোতায়েন করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নাশকতা ঠেকাতে এই বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ৩২ নম্বর এলাকার প্রবেশপথগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহন ও পথচারীর চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এ বিষয়ে রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জিসানুল হক বলেন, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে ৩২ নম্বর এলাকায় নিিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার যেন অবনতি না হয়, সে বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আমাদের কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে।