ক্রমেই বাড়তে থাকা মার্কিন সরকারি ঋণ রেকর্ড ৩৭ ট্রিলিয়ন বা ৩৭ লাখ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে।
ক্রমেই বাড়তে থাকা মার্কিন সরকারি ঋণ রেকর্ড ৩৭ ট্রিলিয়ন বা ৩৭ লাখ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। এর আগে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাসে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের আকার এ উচ্চতায় পৌঁছতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে। এখন ধারণার আগে মার্কিন ব্যালান্স শিটে ঋণের দ্রুত বৃদ্ধি করদাতাদের ওপর বেড়ে চলা চাপের ইঙ্গিত দেয় বলে মত তাদের। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি মার্কিন আর্থিক বাজারসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
মার্কিন অর্থ বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে সরকারি ঋণসংক্রান্ত এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০৩০ সালের পর মোট ফেডারেল ঋণ ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে। কিন্তু ওই সময়ের কমপক্ষে পাঁচ বছর আগে ঋণের নতুন রেকর্ড গড়েছে বিশ্বের শীর্ষ এ অর্থনীতি।
মার্কিন ঋণ প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ২০২০ সালে শুরু হওয়া কভিড মহামারী। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারীর কারণে দেশটির অর্থনীতির বড় একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর ছিল। তখনকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে অর্থনীতি স্থিতিশীল ও পুনরুদ্ধারে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বড় আকারের ঋণ নেয় মার্কিন সরকার। এতে দ্রুত ঋণের আকার বাড়তে থাকে।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে রিপাবলিকানদের উত্থাপিত কর হ্রাস ও ব্যয়সংক্রান্ত একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ আইনের অধীনে আরো সরকারি ব্যয় অনুমোদন পেয়েছে। এখন নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ করের প্রভাবে আগামী এক দশকে মার্কিন জাতীয় ঋণে আরো ৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ১০ লাখ কোটি ডলার যোগ হবে।
মার্কিন সরকারি ঋণ বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে অনেক দিন ধরে সরব রয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকারি ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশের পর গবেষণা সংস্থা পিটার জি পিটারসন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সিইও মাইকেল পিটারসন বলেছেন, ‘সরকারি ঋণ সুদহার বাড়ায়, যা সবার খরচ বাড়ায় এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমায়। ফেডারেল বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারগুলোর হিস্যা নষ্ট করে ঋণ। সুদ বাবদ আরো ব্যয় ও আরো ঋণ গ্রহণের একটি ক্ষতিকর চক্র তৈরি করে নতুন ঋণ।’
কয়েক বছর ধরে সুদহার ও মূল্যস্ফীতির টানাপড়েনে ভুগছে মার্কিন অর্থনীতি। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় সুদহার রেকর্ড উচ্চতায় থাকায় কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের গতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকারি কার্যক্রম পর্যালোচনাকারী মার্কিন সংস্থা গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিস (জিএও) জানিয়েছে, মার্কিনদের ওপর বাড়তে থাকা সরকারি ঋণের প্রভাব পড়ছে। বাড়ি-গাড়ির জন্য তাদের এখন ঋণ বাবদ বেশি সুদ দিতে হবে। ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য তাদের কাছে কম অর্থ থাকছে। অন্যদিকে পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেয়া ঋণের তথ্য বিশ্লেষণ করে মাইকেল পিটারসন জানান, এখন ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলকগুলো দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন সরকারি ঋণের আকার ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। জুলাই ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন জাতীয় ঋণে প্রতি পাঁচ মাসে ১ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করছি, যা গত ২৫ বছরের গড় হারের তুলনায় দ্বিগুণ।’
জাতীয় ঋণের বর্তমান দৈনিক গড় বৃদ্ধির হার অনুসরণ করে জয়েন্ট ইকোনমিক কমিটি (জেইসি) জানিয়েছে, পরবর্তী ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ বৃদ্ধির মাইলফলকে পৌঁছতে লাগবে প্রায় ১৭৩ দিন।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, গত মাসে দেশটির বাজেট ঘাটতি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে ২৯১ বিলিয়ন বা ২৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছে। যদিও একই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি রাজস্ব অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আয়ের চেয়ে দ্রুত ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ঘাটতিতে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (অক্টোবর-জুলাই) মার্কিন বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে। শুল্কনীতিবিষয়ক বক্তৃতা ও প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে আসছিলেন, আমদানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কোম্পানিগুলো দেবে। কিন্তু এরই মধ্যে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে একাধিক কোম্পানি শুল্কের অনেকটাই ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।