সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় ধরে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গত ৩১ জুলাই কেজিপ্রতি ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ ১১ আগস্ট বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের তুলনায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ, যা কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি।
ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, টানা বৃষ্টির কারণে সরবরাহ সংকট এবং গত মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি স্থগিত থাকার ফলে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা বলেন, “চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। শুধু ভারত নয়, ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে আমদানি করতে চাইবেন সেখান থেকেই অনুমতি দেওয়া হবে।”
দেশের চাহিদার তুলনায় ৮ লাখ টন বেশি উৎপাদন হওয়ার পরও মৌসুম শেষের সাথে সাথেই আমদানি বন্ধ এবং টানা বৃষ্টিতে সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দেশজুড়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আড়তদার ও মোকাম মালিকরা।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, আড়তে পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও সরবরাহ সংকটের অজুহাতে পাইকাররা বিক্রি কমিয়ে দেন, ফলে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, “টানা বৃষ্টিতে মোকাম থেকে সরবরাহ কমেছে, সঙ্গে আমদানিও বন্ধ। বাজারে প্রকৃত সংকট নেই, তবে মোকামে পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।”
ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে তদারকি সংস্থাগুলোর কার্যকর নজরদারি নেই, ফলে বছরের পর বছর অরাজকতা চলছে।
ভোক্তা আব্দুল কাদের বলেন, “গত ১৫-২০ বছর ধরে পুরোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় থেকে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।”
মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের পাইকারি আড়তে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮৭ টাকায়—ছোট পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা ও বড় পেঁয়াজ ৮১-৮৭ টাকা। গত সপ্তাহেও এসব পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫ লাখ ৩৭ হাজার টন বেশি। উৎপাদন বৃদ্ধির পরও দাম বৃদ্ধিতে ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে গত মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল। তবে বর্তমান অস্থিরতা ও ভোক্তাদের ভোগান্তি বিবেচনায় এই নীতি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, আমদানি শুরুর সিদ্ধান্ত হলেও সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ও পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।