চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন কুমিরা রেঞ্জ যেন পরিণত হয়েছে অবৈধ কাঠের ‘হাইওয়ে জংশনে’। আর এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম, এমন অভিযোগে সরগরম পুরো এলাকা। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট অবৈধ কাঠ পাচার হয়, যা এখন আর গোপন নয়; বরং ‘ওপেন সিক্রেট’।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই পাচার ব্যবসা থেকে মাসে কোটি টাকারও বেশি ঘুষ লেনদেন হয়। স-মিল, ব্রিক ফিল্ড ও কাঠের দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘মাসোহারা’ ওঠে, যাতে তারা নির্বিঘ্নে অবৈধ কাঠ মজুদ ও বিক্রি চালিয়ে যেতে পারে।
বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চারের নিকট আত্মীয় হওয়ায় মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা কার্যত নেই। ফৌজদারহাট চেক স্টেশনে দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি ‘মাটিটা রিসোর্ট’ নামে একটি স্থাপনাকে বনভূমি দখলের সুযোগ দেন। এখান থেকেও প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা চাঁদা ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া বান্দরবান ও ফৌজদারহাটে দায়িত্বপালনের সময় কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনে জড়িত থাকার ইতিহাসও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে,এই অবৈধ আয়ের বড় একটি অংশ নিয়মিত পৌঁছে দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে, যাতে তারা নীরব থাকে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাসোহারা না দিলে নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়, মামলা দেওয়া হয়, এমনকি ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি আসে। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম মন্তব্য করেন, এসব ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। নিউজ হলে কি হবে, ম্যানেজমেন্ট আমার হাতে, কর্তৃপক্ষ সব জানে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের দাবি, ‘ম্যানেজমেন্টের’ নামে চলতে থাকা এই অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ না হলে অচিরেই বনজ সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারা দ্রুত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবি তুলেছেন।
কুমিরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলমের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আসছে আরও বিস্ফোরক তথ্য।