রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে। এরই মধ্যে বড়-ছোট মিলিয়ে মোট ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই তিন মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করতে মাছ শিকার, বিপণন, পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি চলতি বছরের ১২ মে থেকে হ্রদে ৫৬ মেট্রিকটন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞাকালীন মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২৭ হাজার জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।
তবে মৎস্য করপোরেশন এবং ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতির জন্য আরও দু’দিন বাড়িয়ে অর্থাৎ ৩ আগস্ট হ্রদে মৎস্য আহরণ উন্মুক্ত ঘোষণা করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
গেল ২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সালের ৩০ এপ্রিল হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধকালীন আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আট মাসে শুল্ক বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি। যা গেল অর্থবছরের চেয়ে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা বেশি।
কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের হাত ধরে ১৯৬০ সালে মনুষ্য সৃষ্ট কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হলেও মিঠা পানির এ হ্রদ মৎস্য উৎপাদন ও সরকারের রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
তবে বাণিজ্যিক যাত্রায় এই মাছের কেবল অর্ধেক থেকেই রাজস্ব পায় সরকার। বাকিটা ব্যয় হয় স্থানীয় চাহিদা পূরণে। যেখানে ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গেল পাঁচ অর্থবছরে ৩৫ হাজার সাত মেট্রিক টন মাছ থেকে শুল্ক আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আট মাসে নয় হাজার মেট্রিক টন মাছ থেকে শুল্ক বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি। যেখানে গত অর্থবছরে সাড়ে সাত হাজার মেট্রিক টন মাছ থেকে শুল্ক বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। এবার তার চেয়ে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় এসেছে। এই মৌসুমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। কাপ্তাই হ্রদে মাছের শুল্ক বাবদ রাজস্ব আদায়ে এটি রেকর্ড।
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য ব্যবসায়ী মো. বুলবুল হোসেন বলেন, হ্রদে রুই, কাতল, মৃগেল, আইড়, বোয়ালসহ ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও এর ৯০ থেকে ৯৫ ভাগই চাপিলা আর কেচকি। মিঠাপানির মাছ এবং সুস্বাদু হওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে এই মাছের চাহিদাও বেশি।
কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়ীদের ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, হ্রদে পানি বেশি এবং ঘোলা থাকায় বড় মাছ কম ধরা পড়ছে। ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক কমান্ডার (নৌবাহিনী) মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, গেল বছরে বিএএফডিসির ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ মাছ ধরা হয়েছে এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে। নয় হাজার মেট্রিক টন মাছ থেকে শুল্ক বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি। এ বছরে মাছ ধরার প্রথম সপ্তাহে হ্রদ থেকে ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ধরা হয়েছে। এসব মাছ থেকে এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
কমান্ডার আরও বলেন, যেহেতু আবহাওয়া খারাপ তাই ছোট মাছ পাওয়া গেলেও বড় মাছ আশানুরূপ পাওয়া যাচ্ছে না। পানি কমে গেলে বড় মাছগুলো পাওয়া যাবে।