বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক কমানোর জন্য বাংলাদেশ যেটা করতে পেরেছে আর কোনো দেশ এটা পেরেছে বলে মনে করি না। তবে আমাদের সামনে এখন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়া। আমি মনে করি, এটি ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ। পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, চলমান আছে। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজন হলে আমরা আবার যুক্তরাষ্ট্রে যাব।’
গতকাল গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলের সরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অভ্যর্থনা প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি বিষয়টি তদারকি করেছেন। আমরা রাত-বিরাতে কাজ করেছি। ব্যবসায়ী ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন এটার সঙ্গে। লবিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তারা আমাদের বলল, তোমরা এটা (৩৫ শতাংশ) মেনে নাও। কিন্তু আমরা থেমে যাইনি। আমরা তাদের নিশ্চিত করেছি, এক বছরের মধ্যে ৭৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে ফেলব। এটা আমাদের একটা স্ট্রং পয়েন্ট ছিল। ব্যবসা সহায়ক যত কিছু করা যায় আমরা সব করেছি।’
নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিনটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে দরকষাকষি করেছি। প্রথম বিষয় হচ্ছে যে আমরা নির্বাচিত সরকার নই। ফলে আমরা পরবর্তী সরকারের ওপর কোনো দায়/বাধ্যবাধকতা (অবলিগেশন) রেখে যেতে পারি না। সুতরাং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকতে হবে, তারা এটার পরিবর্তন, পরিমার্জন কিংবা বাতিল করতে পারবে। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি এমন একটা চুক্তি নিয়ে, যেটা বাতিলযোগ্য। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, যতটুকু অবলিগেশন (বাধ্যবাধকতা) আমরা বহন করতে পারব, তার চেয়ে বড় কোনো দায় নেব না। সত্যি বলতে আমরা সবগুলো বাধ্যবাধকতা মেনে নিতে পারিনি। এটির প্রতিফলন শুল্কের হারেও পড়েছে। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটি ছিল শুধুই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। এখানে আমরা তৃতীয় কোনো দেশের উল্লেখ করতে পারব না। আমরা কোনো ভূরাজনৈতিক ফাঁদে পা দিতে চাই না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যখনই যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলা শুরু করে তখন থেকেই আমরা বিষয়টা কাজ শুরু করি। আমরা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়েছি, গবেষকদের কাছে গিয়েছি। নিজেরা বোঝার চেষ্টা করেছি। করণীয় সম্পর্কে একটা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ এখন যে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হলো সেটি আমাদের আপাতত তৃপ্তি। আমরা এটিকে আরো কমাতে চাই।’
বিটিএমএর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাই সরকার ও এ মতিন চৌধুরী, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান, বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজীজ রাসেল, ঢাকা চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিব এইচ চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।