মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ১৭ আগস্ট আলাস্কায় হতে যাওয়া বৈঠকের আগে নিজের দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
মোদির সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপটি এমন এক সময় হয়েছে, যখন রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ২৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফোনালাপ শেষে মোদি জানান, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মোদি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডার অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং ভারত-রাশিয়া বিশেষ কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরো গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
একই দিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন পুতিন। চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, শি জিনপিং ফোনালাপে পুতিনকে বলেন, ‘ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার লক্ষ্যে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা ও সম্পর্কের উন্নতিতে বেইজিং আনন্দিত।’ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বিরোধে চীন মস্কোর অন্যতম প্রধান সমর্থক এবং একই সঙ্গে রাশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী সেপ্টেম্বরে পুতিনের চীন সফরের কথা রয়েছে।
এদিকে সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য পুতিনকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। শান্তিচুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য তিনি রাশিয়াকে একটি সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিলেন। যদি রাশিয়া প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে তাদের রফতানি পণ্য কেনে এমন দেশগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকি দেন ট্রাম্প।
তবে রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, যুদ্ধ অবসানের শর্ত হিসেবে পুতিন ইউক্রেনের বড় ভূখণ্ড দাবি করেছেন। ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চুক্তিতে কিছু ভূমি বিনিময়ের বিষয় থাকতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা এমন একটি ভূখণ্ড চাইছেন যা নিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে লড়াই হচ্ছে। এটি খুবই জটিল। উভয়ের ভালোর জন্যই কিছু অঞ্চল বিনিময় হবে।’ ট্রাম্পের এমন ইঙ্গিতের পর পরই দুই নেতার বৈঠকের ঘোষণা এসেছে।
যুদ্ধ বন্ধের শর্ত নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনায় উপস্থিত ছিল, এমন সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজ ইউরোপীয় নেতাদের একটি সমঝোতায় আনার চেষ্টা করছে, যেখানে রাশিয়া পুরো ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পাবে এবং ক্রিমিয়াও তাদের দখলে থাকবে। প্রস্তাবিত সমঝোতা অনুযায়ী, খেরসন ও ঝাপরিজ্জিয়া অঞ্চল রাশিয়া ছেড়ে দেবে। রাশিয়ার অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি কমিয়ে আনা, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং রাশিয়ার ওপর থাকা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার।
এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘একটি ত্রিপক্ষীয় শান্তি চুক্তি করার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের আছে। ইউরোপীয় নেতারা শান্তি চান, আমার বিশ্বাস প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তি চান এবং জেলেনস্কিও শান্তি চান।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সবকিছু পেতে হবে, কারণ তাকে কিছু স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আমি মনে করি সেজন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করছেন।’
তবে কোনো কিছুর বিনিময়েই নিজেদের ভূমি ছেড়ে দিতে নারাজ ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব কিয়েভ কখনই মেনে নেবে না। ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে বা আমাদের বিরুদ্ধে নেয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত শান্তির বিপক্ষে যাবে।’