মার্কিন শুল্কের আঁচ লাগতে শুরু করেছে ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের গায়ে। ৭ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ায় ভারতের বস্ত্রপণ্যের মার্কিন ক্রেতারা পণ্য গ্রহণ স্থগিত করেছে, বন্ধ রেখেছে নতুন অর্ডার দেওয়াও।
বিশেষজ্ঞ ও শিল্প নির্বাহীরা এই ঘটনায় সৃষ্ট সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ পরিস্থিতিতে গোকালদাস এক্সপোর্টসের মতো বস্ত্র খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের ব্যবসা বহুমুখী করার উপায় খুঁজছে। বিভিন্ন মহাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থাপন ও নতুন বাজার অন্বেষণের সুযোগ খুঁজছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এই পরিস্থিতিতে তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।
অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (এপিইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও কেটি কর্প প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেমাল উদানি এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ডেকান হেরাল্ডকে বলেন, ‘এটি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের জন্য অস্তিত্বের সংকট। বর্তমান কার্যকর শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক মিলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ৪০ শতাংশ। ২৭ আগস্টের পর এটি ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাবে।’
গোকলদাস এক্সপোর্টসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, কেনিয়া ও ইথিওপিয়া দুই দেশের ওপরই যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক থাকায় আফ্রিকায় তাদের ব্যবসা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে। এ বিষয়ে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
গোকলদাস এক্সপোর্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান শিবরামকৃষ্ণান গণপতি বলেন: ‘গত কয়েক বছরে আমরা আমাদের পণ্যের পরিসর বাড়িয়ে এবং ভারত ও আফ্রিকার মতো বিভিন্ন মহাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থাপন করে আমাদের ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেছি। আমরা যেকোনো স্থানে দ্রুত উৎপাদনক্ষমতা যুক্ত করার মতো কৌশলের ওপর জোর দিয়েছি। আমাদের বিক্রির বাজারকেও বহুমুখী করতে শুরু করেছি। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এক্ষেত্রে বড় সহায়ক হবে।’
কটন টেক্সটাইলস এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (টেক্সপ্রোসিল) নির্বাহী পরিচালক সিদ্ধার্থ রাজাগোপাল বলেন, ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ মারাত্মক ধাক্কা। কারণ ভারতের এই খাতের একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এ শুল্ক ও অন্য কোনো দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হলে রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ম্যানমেইড ফাইবার অ্যান্ড টেকনিক্যাল টেক্সটাইলস এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এ. রবিকুমার বলেন, মার্কিন শুল্ক রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধাক্কা হয়েহিসেবে এসেছে। কার্যত ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বস্ত্রপণ্যই রপ্তানি করা সম্ভব হবে না, কারণ রপ্তানিকারক বা ক্রেতা কারও পক্ষেই এত উচ্চ শুল্ক বহন করা সম্ভব নয়।
রপ্তানিকারকরা এখন আশা করছেন, আগামী ২১ দিনের মধ্যে শুল্ক কমানো হবে, যার পরেই শাস্তিমূলক শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা।
খায়তান অ্যান্ড কো-এর অংশীদার আয়ুষ এ. মেহরোত্রা বলেন, ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য এ শুল্কের প্রভাব তাৎক্ষণিক এবং মারাত্মক। তারা এখন মার্কিন বাজারে বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধার মুখে পড়ে গেছেন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো যেহেতু আরও অনুকূল শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে, তাই ক্রেতারা এই বিকল্প উৎসগুলোর দিকে ঝুঁকতে পারে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সংকট আরও তীব্র হবে।
তবে গণপতি বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবাদে চীনের তুলনায় ভারত ১২ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পাবে। এ চুক্তি ভারতকে বাংলাদেশের সমকক্ষও করে তুলবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সুবাদে ভারতীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন।