ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো ‘উইচ হান্টের’ শিকার হচ্ছেন। মূলত এর জন্যই ব্রাজিলের ওপর চড়াও হয়েছেন তিনি।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা মার্কিন শুল্কারোপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ব্রাজিল কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশ মানবে না এবং নিজেকে অপমানিত হতে দেবে না। তবে তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেননি।
এরপরও, মার্কিন বাজারের ব্যবসায়ী এবং মার্কিন গ্রাহকদের চাপের মুখে ট্রাম্প শুল্কের অনেক পণ্যের ওপর ছাড় দিয়েছে। প্লেন, তেল, কাঠের গুঁড়ো, কমলা রসসহ প্রায় ৭০০ পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কফি, গরুর মাংস এবং ফলমূল রপ্তানিতে এই ছাড় পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রাজিলের অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হবে। লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতি ব্রাজিলের রপ্তানি জিডিপির ২০ শতাংশেরও নিচে, যেখানে মেক্সিকোতে এটি এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
আবার, ব্রাজিলের রপ্তানির মাত্র ১৩ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ২০ বছর আগে ২৫ শতাংশ ছিল। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য বেড়ে ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
ট্রাম্পের ছাড়ের ফলে ব্রাজিলের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই শুল্কবিহীন হবে। তাই ইটাউ ইউনিবাঙ্কোর এতা ব্যাংক মনে করছে, কার্যকর শুল্কহার হবে প্রায় ৩০ শতাংশ। গোল্ডম্যান স্যাকস ব্রাজিলের ২০২৫ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২ দশমিক ৩ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে ব্রাজিলের কফি রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্রাজিল প্রতি বছর প্রায় আধা মিলিয়ন টন কফি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৬ শতাংশ। এরই মধ্যে জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাজিলের কফি রপ্তানি কমে গেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। গরুর মাংস এবং ফলমূল রপ্তানিতেও ধাক্কা লেগেছে।
তবে বাজার বৈচিত্র্যের কারণে এই ধাক্কা কিছুটা কমানো সম্ভব। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলোতে ব্রাজিলের কফি ও গরুর মাংস রপ্তানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তুলনায় অন্য দেশে বিক্রি বাড়ানোরও সুযোগ রয়েছে।
ব্রাজিলে লুলা দা সিলভার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত খাতের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা ঘোষণা করেছে। এছাড়া মার্কিন বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে শুল্কের চাপ কমাতে পারে।
লুলা গত ৬ আগস্ট বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। এটি ভবিষ্যতে একটি বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ট্রাম্পের আক্রমণে লুলার জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং তিনি নিজেকে ব্রাজিলীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করছেন।