গমের দাম নিম্নমুখী বিশ্ববাজারে । দেশেও পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই পাইকারি বাজারে বাড়ছে খাদ্যপণ্যটির দাম। সে কারণে বিক্রি হওয়া গমের সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্ববাজারে গমের দাম নিম্নমুখী। দেশেও পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই পাইকারি বাজারে বাড়ছে খাদ্যপণ্যটির দাম। সে কারণে বিক্রি হওয়া গমের সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে আরো বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে বাজার।
ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গমের লেনদেন হয় খুবই সীমিত আকারে। ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ব্যবসায়ীরা মূলত ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসও (সরবরাহ আদেশ) সংগ্রহ করে ফ্লাওয়ার মিল মালিকদের কাছে সরবরাহ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এসও বিক্রি করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। জুলাইয়ের শেষ দিকেও প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মে গম সরবরাহ দেয়া হয় এ প্রক্রিয়ায়। তবে এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রির রসিদ দিয়ে গুদামে গাড়ি পাঠানো হলেও গম দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। উল্টো সিরিয়াল দেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে মিলছে গম। দেরিতে সরবরাহের কারণে গমের বাজার চড়ছে বলে ট্রেডিং ও এসও লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
দেশে আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে অনুমোদিত পদ্ধতি এসও। আমদানিকারকের বিক্রি করা এসও একটি নির্দিষ্ট সময় পর সরবরাহের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিক্রির সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে মিল কিংবা গুদাম থেকে পণ্য সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও লোকসানে থাকা এসওগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাজারে হাতবদল হতে থাকে। তবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে মিল কিংবা গুদামে পণ্য সংগ্রহের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। ওই সময় সরবরাহ পাওয়া না গেলে ঊর্ধ্বমুখী বাজার আরো বেশি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাশিয়া থেকে আমদানি হওয়া গমের দাম মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৩৩০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ১ হাজার ৪২০ থেকে ১ হাজার ৪৩০ টাকায় লেনদেন হয়। কানাডা থেকে আমদানি হওয়া গম একই সময়ে মণপ্রতি ১২০-১৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬২০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকায়। যদিও গমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে চলতি বাজেটে ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন করে এআইটি ও টার্নওভার ট্যাক্স বৃদ্ধিকে দায়ী করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসও কেনার পর মিলগেট কিংবা নির্দিষ্ট গুদাম থেকে যেকোনো সময় পণ্য উত্তোলনের সুবিধা পান ব্যবসায়ীরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে চলা সেই নিয়ম ভেঙে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎই সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। মূলত গমের দাম বাড়ায় এমনটা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ওয়্যারহাউজে গাড়ি পাঠানোর পর ফেরত দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এতে যুক্ত হচ্ছে গাড়ি ভাড়াসহ বাড়তি খরচ।
এদিকে দেশে গমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এরই মধ্যে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ও প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দাম মানভেদে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর সর্বশেষ গত বৃস্পতিবার ময়দার দাম বেড়েছে। আগে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত ময়দা ৬৫-৭০ টাকায় লেনদেন হলেও বর্তমানে তা ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এছাড়া খোলা ময়দা কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকায় এবং প্যাকেট আটা ৫০-৫৫ টাকায়।