ইউরোপের বহু প্রবীণ মানুষের জন্য অবসরের পর জীবনের সবচেয়ে বড় ভরসা হচ্ছে সরকারি পেনশন ও ভাতা।
ইউরোপের বহু প্রবীণ মানুষের জন্য অবসরের পর জীবনের সবচেয়ে বড় ভরসা হচ্ছে সরকারি পেনশন ও ভাতা। কর্মজীবন শেষ হলে নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায় তাদের। যদিও খাবার, বাসাভাড়া, চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ আগের মতোই থেকে যায়। অনেকের জন্য এসব ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় মূলত রাষ্ট্র থেকে পাওয়া মাসিক পেনশন ও ভাতার অর্থে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি সহায়তাই এখন ইউরোপের প্রবীণদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে সরকারি পেনশন ও ভাতা থেকে। অর্থাৎ অবসরের পর তাদের জীবিকার প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে সরকারি সহায়তা। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশে প্রবীণদের মোট আয়ের মধ্যে সরকারি পেনশন ও ভাতার অংশ আরো বেশি।
তবে সরকারি সহায়তা সবার জন্য সমান নয়। নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য কিংবা সুইজারল্যান্ডে প্রবীণদের আয়ের বড় অংশ আসে বেসরকারি কর্মস্থলভিত্তিক পেনশন ও সঞ্চয় থেকে। আবার লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া বা লিথুয়ানিয়ার মতো দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবীণ এখনো আয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। লাটভিয়ায় প্রবীণদের আয়ের ৪০ শতাংশই আসে চাকরি থেকে।
ইউরোপের অনেক দেশে অবসরের পরও প্রবীণদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হয়। কারণ সরকারি সহায়তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়ের উৎসে এ ধরনের বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক বাস্তবতাই নয়, বরং প্রতিটি দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ধরনও তুলে ধরে।
ব্যক্তিগত পেনশন ও সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরতা ইউরোপে এখনো সীমিত। ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড বা তুরস্কে মূলধন (ব্যক্তিগত পেনশন, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ) থেকে আয় তুলনামূলক বেশি হলেও অনেক দেশে তা ৫ শতাংশেরও নিচে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘায়ু ও অর্থনৈতিক চাপের যুগে প্রবীণদের জন্য বৈচিত্র্যময় আয়ের উৎস গড়ে তোলা জরুরি।
পশ্চিম ইউরোপের প্রবীণরা অন্য অঞ্চলের তুলনায় সরকারি সহায়তার ওপর বেশি নির্ভর করেন। নর্ডিক দেশগুলো (যেমন ডেনমার্ক, সুইডেন) সরকারি পেনশনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও কর্মস্থলভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে। পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপের অনেক দেশে প্রবীণদের আয়ের বড় অংশ এখনো কাজ থেকে আসে।
ওইসিডি বলছে, প্রবীণদের আয়ের বৈচিত্র্যময় এ চিত্র প্রকৃতপক্ষে ইউরোপের দেশগুলোর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পার্থক্য তুলে ধরে। কোথাও সরকারি পেনশনের ওপর নির্ভরতা বেশি, আবার কোথাও ব্যক্তিগত পেনশন বা সঞ্চয়ের ভূমিকা বড়। নীতিনির্ধারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো একদিকে ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা, অন্যদিকে এ ব্যয় যেন দেশের অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ না ফেলে সেটিও নিশ্চিত করা।
বিশ্লেষকদের মতে, মানুষের গড় আয়ু যত বাড়ছে, অবসরের পর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ততই কঠিন হয়ে উঠছে। বর্তমান সহায়তা কাঠামো অনেক দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। তাই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও আয়ের নতুন উৎস খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে।