বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় — যা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মোট ওজনের থেকেও বেশি। এর মাত্র ৯ শতাংশই পুনর্ব্যবহার হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদনের কারণে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ একটি বৈশ্বিক চুক্তি করার চেষ্টা করছে যাতে প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু বিশেষ করে প্লাস্টিক উৎপাদনে সীমাবদ্ধতা আরোপের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আলোচনা বারবার ভেস্তে যাচ্ছে।জ্বালানি তেল-নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো এ চুক্তির পথরোধ করে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে আবারো বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলো। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো গেলেও এর সুফল পেতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে।
এই অবস্থায় বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা বাজারভিত্তিক বিকল্প খুঁজছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিক অফসেটিং।
প্লাস্টিক অফসেটিং মূলত কার্বন ক্রেডিটের মত একটি পদ্ধতি। কার্বন ক্রেডিটে একটি প্রতিষ্ঠান তার কার্বন নির্গমন নিরপেক্ষ করতে যেমন বনায়ন কর্মসূচির মতো অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করে, তেমনি প্লাস্টিক ক্রেডিটে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের কাজ করা হয়।
যদি একটি কোম্পানি এক টন প্লাস্টিক সংগ্রহ করাতে পারে, তারা এক প্লাস্টিক ক্রেডিট পায়। যদি তারা তাদের মোট প্লাস্টিক উৎপাদনের সমপরিমাণ ক্রেডিট কেনে, তবে তারা ‘প্লাস্টিক নিউট্রাল’ বা ‘প্লাস্টিক নেট জিরো’ কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
কার্বন ক্রেডিটের মতো প্লাস্টিক ক্রেডিটের ক্ষেত্রেও বিতর্ক রয়েছে। ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্লাস্টিক ক্রেডিটের মাত্র ১৪ শতাংশ আসলেই পুনর্ব্যবহার কাজে লাগে। বাকিটা বেশিরভাগ সময় সিমেন্ট কারখানায় জ্বালানি হিসেবে পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা কার্বন ডাই অক্সাইড ও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এমন বিষাক্ত গ্যাস নিসঃসরণ করে।
বিশ্বব্যাংক এ প্লাস্টিক ক্রেডিট প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। সেইসঙ্গে এগুলোকে ‘পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের নতুন মাধ্যম’ হিসেবে দেখছে। তবে এই পদ্ধতিকে শুধু বড় কোম্পানিগুলোর জন্য ‘গ্রিন ওয়াশিং’ অর্থাৎ ‘পরিবেশবান্ধব দেখানোর ছল’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেল কোম্পানি ও বড় প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা প্লাস্টিক ক্রেডিট এবং বাজারভিত্তিক সমাধানের পক্ষে। তবে তারা প্লাস্টিক উৎপাদনে কোনো ধরনের সীমা বা নিষেধাজ্ঞা চান না, কারণ প্লাস্টিকই তাদের মুনাফার বড় একটি উৎস।