১৫.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ইতালি সরকার। এই সেতুটি ইতালির মূল ভূখণ্ডের ক্যালাব্রিয়া অঞ্চলের সঙ্গে সিসিলি দ্বীপকে যুক্ত করবে।
ডিজাইনারদের দাবি, ভূমধ্যসাগরের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় নির্মিত হলেও সেতুটি যেকোনো ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করে টিকে থাকতে পারবে।
মেসিনা সেতু প্রকল্প চালুর জন্য ইতালির কর্মকর্তাদের নতুন প্রচেষ্টা এটি। এর আগেও অনেকে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ব্যয়, পরিবেশগত ক্ষতি, নিরাপত্তা বা মাফিয়ার সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ উদ্বেগে নানা সময়ে পরিকল্পনাগুলো বাতিল হয়ে গেছে।
চূড়ান্ত প্রকল্প অনুযায়ী, মেসিনা প্রণালীর উপর নির্মিতব্য এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৩.৩ কিলোমিটার। সেতুটি ৪০০ মিটার উঁচু টাওয়ারের মধ্যে বিস্তৃত থাকবে। এর মাঝখানে দুটি রেললাইন ও দুপাশে তিনটি করে যান চলাচলের লেন থাকবে।
রোম এই সেতুকে সামরিক ব্যয় হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার আশা করছে। উদ্দেশ্য, প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয়ের যে ন্যাটো-লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তাতে এটি অন্তর্ভুক্ত করা।
পরিবহন মন্ত্রী ও মেলোনির জোট সরকারের শরিক দল লেগা পার্টির নেতা মাত্তেও সালভিনি এই মাইলফলককে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ২০৩২ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করাই তাদের লক্ষ্য।
তিনি আরও দাবি করেন, এই সেতু বছরে ১ লাখ ২০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনবে। উল্লেখ্য, সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়া ইউরোপের অন্যতম দরিদ্র দুই অঞ্চল।
তবে এই প্রকল্পকে ইতালির নিরীক্ষা আদালত এবং জাতীয় ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যায়ের পরিবেশ সংস্থাগুলোর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেতে হবে।
প্রণালীর দুই পাশে বসবাসরত যেসব স্থানীয় বাসিন্দার সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হতে পারে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। স্থানীয়রা আইনগতভাবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারবে, যার ফলে সেতু নির্মাণ বিলম্বিত বা পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
এ সেতুর নির্মাণকাজ আটকে যাওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে এর প্রথম পরিকল্পনা তৈরির পর থেকে নানা কারণে বিভিন্ন ধারণা বাতিল করতে হয়েছে; দীর্ঘদিন ধরে কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে এ সেতু।
এর মধ্যে অন্যতম একটি উদ্বেগ ছিল, করদাতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়ার মাফিয়া গোষ্ঠীগুলো আত্মসাৎ করে নেবে। দক্ষিণ ইতালির রাজনীতি ও সমাজে এসব গোষ্ঠীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
বুধবার স্থানীয় রাজনীতিবিদরা সরকারের এই সিদ্ধান্তে তাদের অসন্তোষ পুনর্ব্যক্ত করেন।
ক্যালাব্রিয়ার তীরে যেখানে সেতুটি নির্মিত হবে, তার নিকটবর্তী ভিলা সান জিওভান্নি শহরের মেয়র জিউসি কামিনিত্তি বলেন, তার শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই সেতু নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো আরও বলছে, এটি নির্মাণে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করা হবে, অথচ সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়া উভয় অঞ্চলই নিয়মিত খরায় ভোগে।
বর্তমানে প্রণালী পারাপারের একমাত্র উপায় হলো ট্রেনের বগিগুলোকে ফেরিতে তুলে সমুদ্র পার করা। এতে আধঘণ্টা সময় লাগে।