আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে মেয়াদপূর্তি হতে যাচ্ছে বেক্সিমকোর বহুল আলোচিত গ্রিন সুকুকের। তবে বেক্সিমকো নির্ধারিত সময়ে সুকুকের মূলধন পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানা গেছে এ সংক্রান্ত একটি কমিটির বৈঠক সূত্রে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
মেয়াদপূর্তির মাত্র এক বছরের মতো সময় বাকি থাকলেও বেক্সিমকোর বহুল আলোচিত ৩,০০০ কোটি টাকার গ্রিন সুকুক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে; মূলধন ফেরত নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সুকুকের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হওয়া এই সুকুক একটি শরিয়তসম্মত আর্থিক উপকরণ হিসেবে পরিচিত। এটি বন্ডের মতো হলেও এতে সুদের পরিবর্তে সম্পদভিত্তিক মুনাফার ভিত্তিতে আয় করেন বিনিয়োগকারীরা।
সম্প্রতি সুকুকের শর্ত পর্যালোচনা ও পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সুকুকের ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
“আইসিবির মতামত পাওয়ার পর আমরা গভর্নরের কাছে দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করব। এরপর বিএসইসির সঙ্গে পরামর্শ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” মঙ্গলবার টিবিএসকে এমনটাই জানিয়েছেন কমিটির একজন সদস্য। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
আগামী বছর (২০২৬) ডিসেম্বরে মেয়াদপূর্তি হতে যাওয়া এই সুকুক বন্ডে বিনিয়োগকারী ৫,৬০০ প্রাতিষ্ঠানিক ও খুচরা বিনিয়োগকারীর জন্য সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। ফলে গত কয়েক মাসে মূলধন ফেরত নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গ্রুপ নানা সমস্যায় পড়ায় প্রতিষ্ঠানটি পর্যাপ্ত নগদ অর্থ জোগাড় করে মূলধন পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
এই সুকুক থেকে উত্তোলিত অর্থ মূলত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে গাইবান্ধার তিস্তা সোলার ২০০ মেগাওয়াট প্রকল্প চালু রয়েছে, তবে পঞ্চগড়ের করতোয়া সোলার ৩০ মেগাওয়াট প্রকল্পটি এখনো নির্মাণাধীন।
১৬ জুনের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে সুকুকের মূলধন পরিশোধ করতে পারবে না বেক্সিমকো। এ পরিস্থিতিতে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কমিটির সদস্যরা একমত হয়েছেন।
এদিকে, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বেক্সিমকো ও পিডিবির মধ্যে ২০ বছরের চুক্তি রয়েছে। তিস্তা সোলার পার্ক চালু রয়েছে এবং এখন থেকে মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। করতোয়া সোলার পার্ক চালু হলে তা থেকে মাসে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, সুকুক পরিশোধের জন্য গঠিত ২৫০ কোটি টাকার সিঙ্কিং ফান্ডে ইতোমধ্যে জমা থাকা অর্থও মূলধন পরিশোধে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে সুকুকটি সম্পদ-ভিত্তিক হওয়ায় মেয়াদ না বাড়ালেও বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রি করে মূলধন আদায়ের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সম্পদের মূল্যায়ন ও দামের জটিলতা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় সংশ্লিষ্টরা আপাতত মেয়াদ বাড়ানোকেই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য সমাধান হিসেবে দেখছেন।
এছাড়া, গত ২৪ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বেক্সিমকো গ্রুপ থেকে ঋণ আদায়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, প্রয়োজনীয় নথিপত্র অসম্পূর্ণ থাকা এবং বেক্সিমকোর সীমিত পরিশোধ সক্ষমতার কারণে গ্রিন সুকুকের শর্ত পুনর্গঠন করা হবে।
বেক্সিমকো যদি সুকুকের অর্থ পরিশোধে খেলাপি হয়, তাহলে কী হবে
সুকুকের ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম (আইএম) অনুযায়ী, যদি মূল প্রবর্তক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ইচ্ছাকৃতভাবে ধারাবাহিকভাবে তিনটি কিস্তি অথবা ইজারা চুক্তির অধীনে ১২ মাসের জন্য সুকুকহোল্ডার বা ইস্যুকারীকে অর্থ না দেয়—যেটি আগে ঘটে—তাহলে সুকুকসম্পদের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ট্রাস্টি কমিটির হাতে চলে যাবে। এরপর কমিটিই সুকুকের সম্পদের দায়িত্ব নেবে।
প্রয়োজনে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা নিয়ে ট্রাস্টি কমিটি সম্পদ তরলীকরণ (লিক্যুইডেশন) অথবা অন্য কোনো যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নিতে পারবে। এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তা অবিলম্বে বিএসইসিকে জানাতে হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।
আরও ২১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ট্রাস্টি আইসিবি
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পাশাপাশি সুকুক বন্ডটির ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ২১ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিতে বন্ডে বিনিয়োগকারী ১১টি ব্যাংকের প্রতিনিধি ছাড়াও একজন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই কমিটি সুকুকের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন পর্যালোচনা ও সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরি করে ডেপুটি গভর্নর কবির আহমেদের কাছে জমা দেবে।
আইসিবির এসপিভি ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, “বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী শুধু মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষেই নন, পাশাপাশি সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শও দিচ্ছেন। কারণ, প্রকল্প চালু থাকায় সেখানে থেকে আয় হওয়াটা নিশ্চিত, যা দিয়ে মূলধন ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে বর্তমানে সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও এই বন্ডে হার ৯ শতাংশ—ফলে এটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে বলে মত তাদের।”
মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যা বলছে বিএসইসি
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র আবুল কালাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, “বন্ডটির বিদ্যমান টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে পরিবর্তন আনতে বিএসইসির অনুমতি লাগবে। কারণ কমিশনের সিদ্ধান্ত ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো বা শর্তাবলি পরিবর্তন করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বন্ডের শর্তাবলিতে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে অর্জিনেটর (বেক্সিমকো)-এর সঙ্গে আলোচনা করে ট্রাস্টি কমিশনের কাছে আবেদন করবে। কমিশন প্রস্তাব খতিয়ে দেখে প্রয়োজন মনে করলে অনুমতি দেবে।”
বেক্সিমকো লিমিটেডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেক্সিমকোর ব্যবসা আংশিকভাবে চলছে, যেখানে অপারেটিং খরচ সামাল দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। মেয়াদ ঘনিয়ে আসায় পরিশোধ নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা থাকলেও যেহেতু বন্ডটি সম্পদ-ভিত্তিক, তাই খুব বেশি আতঙ্কের কিছু নেই।”
বড় আশার জায়গা এখন সিঙ্কিং ফান্ড
ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম (আইএম) অনুযায়ী, অর্জিনেটর প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা সিঙ্কিং ফান্ড ট্রাস্ট অ্যাকাউন্টে জমা দেবে—যতদিন না পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট সম্পাদিত হয় এবং এক্সারসাইজ প্রাইস পরিশোধ করা হয়। এই ফান্ড থেকেই সুকুকহোল্ডারদের চূড়ান্ত মূলধন ফেরত (ফাইনাল রিডেম্পশন পেমেন্ট) প্রদান করা হবে।
সিঙ্কিং ফান্ডের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো—বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের এক্সারসাইজ প্রাইস পরিশোধ ও রিডেম্পশন নিশ্চিত করা। এছাড়া, এটি প্রয়োজনে অর্ধবার্ষিক আয়ভিত্তিক কিস্তির ঘাটতি পূরণ ও আবশ্যিক রিডেম্পশন অর্থ পরিশোধেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আইসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, “বিনিয়োগকারীদের মূলধন ফেরতের সবচেয়ে বড় ভরসা এখন সিঙ্কিং ফান্ড। বর্তমানে এই ফান্ডে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার মতো স্থিতি রয়েছে। যদিও বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত হারে টাকা রাখা হলে এত পরিমাণ স্থিতি সম্ভব হতো না।”
তিনি আরও জানান, সরকার পরিবর্তনের পর আইসিবির দূরদর্শিতায় এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তে প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে আয় হওয়া অর্থের একটি অংশ নিয়মিতভাবে সিঙ্কিং ফান্ডে জমা হচ্ছে।
বন্ডটির ট্রাস্টি সূত্রে জানা গেছে, সুকুকের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে দুটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেবল ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিস্তা সোলার পার্কই চালু হয়েছে। করতোয়া সোলার লিমিটেড (কেএসএল) এখনো চালু হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, করতোয়া সোলার প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন সৌর প্যানেল স্থাপন করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা গেলে এই প্রকল্প থেকেও রাজস্ব আয় শুরু হবে।
তবে, গত বছরের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় করতোয়া প্রকল্পের কিছু যন্ত্রাংশ—বিশেষ করে ট্রান্সফরমার—পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে নতুন করে প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে ট্রাস্টি সূত্র।
বন্ডটির প্রধান বিনিয়োগকারীরা কারা
ট্রাস্টি সূত্রে জানা গেছে, বন্ডটিতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় দুই ডজন ব্যাংক এবং কয়েকটি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। কোনো কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।
ফলে নির্ধারিত সময়ে বিনিয়োগ ফেরত না পেলে এসব ব্যাংককে বড় অঙ্কের প্রভিশনিংয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। একইসঙ্গে, বন্ডটিতে বিনিয়োগ করা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও পড়বেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।
বিনিয়োগকারীদের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ৫,৬০০ বিনিয়োগকারী বন্ডটির ইউনিট কিনেছেন। এর মধ্যে শীর্ষ ৩১ বিনিয়োগকারী কিনেছেন ২৫.৮৩ কোটি ইউনিট—যার প্রতিটি ইউনিটের মূল্য ১০০ টাকা করে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২,৫৮৩ কোটি টাকা।
এই তালিকায় রয়েছে ২২টি ব্যাংক, কয়েকটি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস, একটি বীমা প্রতিষ্ঠান এবং একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এমনকি কিছু ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গঠিত বিশেষ ফান্ড থেকেও এই বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করেছে।
সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে আইএফআইসি ব্যাংক, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ এবং রূপালী ব্যাংক। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের বিনিয়োগ ৩০০ কোটি টাকার বেশি, আইএফআইসি সিকিউরিটিজের ২০০ কোটি টাকার বেশি এবং রূপালী ব্যাংকেরও প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।
এছাড়া সিটি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের স্পেশাল ফান্ড, সাউথইস্ট ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক এবং অগ্রণী ইকুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট—এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিরই ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।
এছাড়াও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, অগ্রণী ইকুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং সিটি ব্রোকারেজ—এই প্রতিষ্ঠানগুলোরও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে।
২০২১ সালে বেক্সিমকো এই সুকুক বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মোট ৩ হাজার কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে। ফলে বন্ডটির ম্যাচিউরিটি অর্থাৎ, আগামী এক বছর চার মাসের মধ্যে এই বন্ডের বিপরীতে প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে।
তবে ইতোমধ্যে বন্ডের কিছু ইউনিট বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তরিত হওয়ায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর বেক্সিমকো লিমিটেডের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস—বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত ইয়ার্ন ইউনিট-২, টেক্সটাইল, ডেনিম এবং নিটিং বিভাগ—বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি অর্থসংকট ও কাঁচামালের ঘাটতিতে পড়ে, যার ফলে এসব ইউনিট বন্ধ করতে হয়। বর্তমানে কেবল ইয়ার্ন ইউনিট-১ চালু রয়েছে।
রূপান্তরের সুযোগ থাকলেও আগ্রহী নন সুকুকহোল্ডাররা
সুকুকহোল্ডারদের জন্য বেক্সিমকো লিমিটেডের সাধারণ শেয়ারে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত সুকুক রূপান্তরের সুযোগ রয়েছে। প্রতি বছর তারা মোট সুকুকের ২০ শতাংশ পর্যন্ত রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এই রূপান্তর বা কনভার্সন ৫%, ১০%, ১৫% অথবা ২০% হারে বছরে একবার করা যায়। নির্ধারিত বছরে ব্যবহৃত না হওয়া অংশ পরবর্তী বছরগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করা যায়।
রূপান্তরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে রেকর্ড তারিখের আগের ২০ কার্যদিবসের ওয়েটেড-এভারেজ মার্কেট প্রাইসের চেয়ে ২৫ শতাংশ ছাড়ে।
তবে সুকুকহোল্ডারদের মধ্যে এই সুযোগ নেওয়ার আগ্রহ খুবই কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো—বেক্সিমকো লিমিটেডের কারখানার একাধিক ইউনিট আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আয় ও মুনাফা দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেক্সিমকো লিমিটেড ৩৫৬ কোটি টাকার লোকসান করেছে। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ কোম্পানিটি ৩৫ কোটি টাকা লোকসান গোনে; ফলে সে বছর কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।
অর্ধবার্ষিক এ লোকসান সম্পর্কে কোম্পানির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ব্যাংকিং সহায়তা না থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ অবস্থায় ছিল। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে কোনো ব্যাংকই এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলেনি বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
এছাড়া, গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় মজুদকৃত কাপড় ও সুতা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। ফলে এগুলো উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এসব সমস্যার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কর পরবর্তী নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৫৬.৪৮ কোটি টাকা; আর শেয়ারেপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৭৮ পয়সা।