জ্বালানি তেলের উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তোলনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস।
জ্বালানি তেলের উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তোলনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। এতে জ্বালানি পণ্যটির জোগান বেড়ে বাজার নিম্নমুখী হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে গতকাল এ নিম্নমুখিতায় লাগাম টেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখলে ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল আগের দিনগুলোর চেয়ে তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল জ্বালানি পণ্যটির বাজারদর। বিভিন্ন বাজার আদর্শে পণ্যটির দাম কমেছে ব্যারেলপ্রতি ১-২ সেন্ট।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম গতকাল ব্যারেলপ্রতি ৬৮ ডলার ৭৫ সেন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় ১ সেন্ট কম। এ সময় মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ২ সেন্ট কমে হয়েছে ৬৬ ডলার ২৮ সেন্ট।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াংকা সচদেবা বলেন, ওপেক প্লাসের বাড়তি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে রুশ জ্বালানি তেল সরবরাহে সম্ভাব্য ঘাটতির ঝুঁকি সামাল দিচ্ছে।
ওপেক প্লাস সেপ্টেম্বর থেকে দৈনিক ৫ লাখ ৪৭ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজারের অংশীদারত্ব পুনরুদ্ধার ও রাশিয়া থেকে সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কার কারণে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। রোববার সংক্ষিপ্ত এক অনলাইন বৈঠকে ওপেক প্লাসের আটটি সদস্য দেশ উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়। যদিও বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রকৃত উত্তোলন বৃদ্ধির পরিমাণ এর চেয়ে কম হতে পারে।
তবে মোটাদাগে জ্বালানি পণ্যটির বাজার এখন মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে। জেপি মরগান এক বিশ্লেষণী নোটে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ায় মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। পাশাপাশি চীনের জুলাইয়ের পলিট ব্যুরো বৈঠকে নতুন কোনো প্রণোদনার ঘোষণা না আসায় দেশটির অর্থনীতিতে গতি ফেরানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে সরবরাহ ব্যবস্থায় সম্ভাব্য বিঘ্ন নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো হুমকি দিয়েছেন, রুশ জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর, বিশেষ করে ভারতের ওপর— দেশটিতে ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এর আগে জুলাইয়ে তিনি ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
সোমবার ট্রাম্প আবারো ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। জবাবে নয়াদিল্লি তার অবস্থানকে ‘অন্যায্য’ আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, তারা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ আরো তীব্র আকার নিচ্ছে।
বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট এক সূত্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত ভারত দৈনিক গড়ে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি ও বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর এর প্রভাব বিবেচনা করছেন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এ পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে জ্বালানি তেলের চাহিদাও হ্রাস করতে পারে।