দেশের শেয়ারবাজার ছাড়ছেন ছোট বিনিয়োগকারীরা, বিপরীতে বাড়ছে কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিবেদনেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন এবং চলতি বছরের ৩০ জুন সময়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিএসইসি।
এদিকে চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব কমেছে ৩৭ হাজারের ওপরে। বিও হিসাব কমার তালিকায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও রয়েছেন। সেই সঙ্গে কমেছে কোম্পানির বিও হিসাব।
বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউব অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব নয়। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
বিএসইসি’র প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবকে ৯টি ধাপে ভাগ করা হয়েছে। যেসব বিও হিসাবের পোর্টফোলিও ভ্যালু (বিনিয়োগ করা শেয়ার ও মিউচুলয়াল ফান্ডের ইউনিটের মূল্য) ৫০০ কোটি টাকার বেশি, সেটি রাখা হয়েছে প্রথম ধাপে। আর সর্বনিম্ন ধাপে রাখা হয়েছে ১ লাখ টাকার কম পোর্টফোলিও ভ্যালু থাকা বিও হিসাব।
বিএসইসি ৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকা এবং তার বেশি পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন বিও হিসাবকে বৃহৎ বিনিয়োগকারী হিসেবে অভিহিত করেছে। আর মাঝারি বিনিয়োগকারী বলা হয়েছে ৫০ লাখের বেশি ও ৫০ কোটি টাকার নিচের পোর্টফোলিও-কে। ১ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগকারীদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলা হয়েছে। যে পোর্টফোলিও এর ভ্যালু ১ লাখ টাকার কম তাকে অতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ আছে ৭০টি বিও হিসাবে। গত বছরের ৩০ জুন এই সংখ্যা ছিল ৬৮টি। ১০০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ৩৪৭টি, যা গত বছরে ছিল ৩২৫টি। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি ও ১০০ কোটি টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ৭৩৩টি, যা গত বছর ৬৯৬টি।
এছাড়া ১০ কোটি টাকার বেশি ও ৫০ কোটি টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ২ হাজার ৮৯১টি, যা গত বছরে ছিল ২ হাজার ৮৯৪টি। ১ কোটি টাকার বেশি ও ১০ কোটি টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ১৩ হাজার ৩১৬টি, যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৯৯৩টি।
অন্যদিকে কোটি টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ২৪ হাজার ২২৫টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৯০৭টি। ১০ লাখ টাকার বেশি ও ৫০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৩৩টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৮ হাজার ৩৭১টি।
এছাড়া ১ লাখ টাকার বেশি ও ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩৮৫টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৪টি। আর এক লাখ টাকার কম বিনিয়োগ থাকা বিও হিসাব আছে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৮টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৫৭টি।
এদিকে সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে (৪ আগস্ট) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮০৪টি। যা গত ৩০ জুন ছিল ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯২১টি। এ হিসাবে এক মাসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব কমেছে ৩৭ হাজার ১১৭টি।
বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ৪৪ হাজার ৫৬০টি। গত ৩০ জুন বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিলো ৪৫ হাজার ৯০৭টি। অর্থাৎ এক মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৩৪৭টি।
বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয় ২০২৩ নভেম্বর থেকে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ১০ হাজার ৯৫২টি।
বিদেশি ও প্রবাসীদের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমেছে। সিডিবিএল’র তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭২৮টি, যা গত ৩০ জুন ছিল ১৬ লাখ ২১ হাজার ২৮৯টি। অর্থাৎ এক মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৩৫ হাজার ৫৬১টি।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৯টি। গত ৩০ জুন এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৮টি। অর্থাৎ এক মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ২৭ হাজার ৬৯টি।
অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮১৯টি। গত ৩০ জুন এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৬৫৮টি। এ হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজার ৮৩৯টি।
নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি গত এক মাসে কোম্পানির বিও হিসাবও কমছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৫১৬টি। গত ৩০ জুন এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৭২৫টি। এ হিসাবে কোম্পানি বিও হিসাব কমেছে ২০৯টি।