মার্কিন কোম্পানি ক্রাফট হেইন্জ, স্কিটলস ও জেনারেল মিলস সম্প্রতি তাদের খাদ্যপণ্যে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন কোম্পানি ক্রাফট হেইন্জ, স্কিটলস ও জেনারেল মিলস সম্প্রতি তাদের খাদ্যপণ্যে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছে। একে কোম্পানিগুলো গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা উল্লেখ করলেও এতে রাজনৈতিক রঙ ছড়ানোর অভিযোগ করছেন অনেকে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, কোম্পানিগুলোর এ উদ্যোগ মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষিত ‘মেক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেইন’ বা এমএএইচএ কর্মসূচির ফল। কিছুদিন আগে কোকা-কোলায় ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপের বদলে মার্কিন আখের চিনি ব্যবহারের পরিকল্পনাকেও নিজের কৃতিত্ব বলে দাবি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর সিএনএন।
কিছু পুষ্টিবিদ ও জনস্বাস্থ্য গবেষকের দাবি, এখন পর্যন্ত খাদ্যপণ্যে যেসব পরিবর্তন দেখা গেছে সেগুলো শুধুই প্রচার। অনেক আগে থেকেই প্রাকৃতিক উপাদানভিত্তিক পণ্য সরবরাহের পদক্ষেপগুলো প্রক্রিয়াধীন ছিল। কারণ খাদ্যপণ্যের স্বাস্থ্যমান নিয়ে জনগণ অনেক সচেতন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য কুপন, গবেষণা ও জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে বাজেট ছাঁটাই করে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিনদের স্বাস্থ্যবিষয়ক লক্ষ্যকে খাটো করছে।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ব্যারি পপকিনের মতে, এ পরিবর্তনগুলো শুধু উপরি বিষয়, স্বাস্থ্যের ওপর এর কোনো বাস্তব প্রভাব নেই। এমএএইচএর সঙ্গে যুক্তরা এতে কিছু অর্জন করেছে বলে দাবির সুযোগ নিচ্ছে। এটা স্রেফ পিআর বা জনসংযোগ।
সম্প্রতি খাদ্যে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হয়েছেন মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। কিন্তু গবেষকদের মতে, কেনেডির কৃত্রিম রঙের ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ মূল সমস্যাকে আড়াল করছে। কারণ মূল স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করে সহজলভ্য, সস্তা, অতিরিক্ত লবণ-চিনি-চর্বিতে ভরা অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার।
ব্যারি পপকিন বলেন, ‘সে যতই কৃত্রিম ফ্লেভার না থাকুক আইসক্রিম তো আইসক্রিমই থাকবে, আর সোডা তো সোডাই।’
গবেষকদের মতে, মার্কিনদের খাদ্যাভ্যাসে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মার্কিন খাদ্য সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ দখল করে আছে চিপস, কুকিজ, ক্যান্ডি, আইসক্রিমসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবার স্থূলতা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্পর্কে ব্যারি পপকিনের অভিযোগ, এখনো তারা মূল অপরাধী। অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে যাচ্ছে না। যদি কেনেডি এ নিয়ে সত্যিই কিছু করেন, সেটা হবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশাল অর্জন।
পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি কৃত্রিম রঙ সাধারণত খাবার ও পানীয়কে আকর্ষণীয় করে তোলে। বিশেষ করে শিশুরা এসব খাবারে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এসবের কারণে পশু ও মানবস্বাস্থ্যে ক্যান্সার ও কিছু শিশুর মধ্যে স্নায়বিক আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। জানুয়ারিতে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) খাবার, পানীয় ও ওষুধে লাল রঙ নিষিদ্ধ করে।
মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখন খাদ্যপণ্য থেকে স্বেচ্ছায় কৃত্রিম রঙ সরিয়ে ফেলার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে ভোক্তা ও পরামর্শকদের চাপে এবং ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মতো রাজ্যের বিধিনিষেধে এগুলো আগে থেকে বাদ দিচ্ছিল। যেমন ক্রাফট হেইন্জ ও জেনারেল মিলস অনেক আগেই বেশির ভাগ পণ্যে কৃত্রিম রঙ বাদ দিয়েছে।
কৃত্রিম রঙ নিয়ে কৃতিত্ব দাবির মাঝে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য নীতি মার্কিনদের স্বাস্থ্যোন্নয়ন প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের। এর কারণও রয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস জানিয়েছে, ট্রাম্পের ব্যাপক কর ও ব্যয়ের ছাঁটাই নীতির ফলে ২০৩৪ সালের মধ্যে আরো এক কোটি মানুষ স্বাস্থ্য বীমা হারাবে।