রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪.৯ শতাংশ বেশি।
একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রপ্তানি এর আগে কখনও হয়নি।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও পরে সেই তথ্য সংশোধন করায় তা ৪.১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলনের কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় কম রপ্তানির ওপর এবার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি দেখা যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের পোশাকে প্রায় ২৬ শতাংশ শুল্ক ছিল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে। এরপর দেশটির বাজারে আগের শুল্ক বজায় থাকলে দিতে হতো প্রায় ৫৬ শতাংশ। যদিও শেষপর্যন্ত কমানোর পর তা প্রায় ৩৬ শতাংশ হবে। কিন্তু অনিশ্চয়তার কারনে বর্ধিত শুল্ক থেকে বাঁচতে দেশটির ক্রেতারা জুলাইয়ের মধ্যেই পণ্য তৈরি করে শিপমেন্ট করতে বলে।’
‘জুলাই মাসে রপ্তানি বাড়ার অন্যতম কারণ এটি,’ বলেন শোভন। তার কোম্পানি বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে, যার অর্ধেকেরও বেশি যায় যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। দেশটিতে বছরে প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসানও বছরওয়ারি এই বড় প্রবৃদ্ধির পেছনে গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
আরও দুজন বড় রপ্তানিকারক একই ধরনের মত দিয়েছেন। তারা বলেন, বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে সরবরাহ চেইনের ঝুঁকি এড়াতে অনেক মার্কিন ক্রেতা আগেভাগেই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করায় এবং অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় একই হার কিংবা কোনো কোনো মূল প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কম থাকায় রপ্তানি আদেশ হারানোর শঙ্কা করছেন না রপ্তানিকারকরা।
বরং আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আদেশ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার বলেন, ‘বর্তমানে অর্ডার কিছুটা ধীর—এটা স্বাভাবিক। তবে আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আদেশ বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’
বিকেএমইএ-র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রপ্তানিকারকদের স্বাভাবিক রেটের তুলনায় কম রেটে ক্রয়াদেশ না নেওয়া বা ডিসকাউন্ট না দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘২০ শতাংশ শুল্কের চাপ আমরা কোনো রপ্তানিকারক যাতে না নিই। কেউ যদি বর্তমানের রেটের তুলনায় কম রেটে ক্রয়াদেশ নেন, তাহলে তাকে লোকসান গুনতে হবে। বর্তমান রেটের চেয়ে কম রেটে অর্ডার নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
‘ফলে আগস্টেও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে আশা করছি,’ বলেন তিনি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। জুলাইয়ে এ খাতের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যান্য কয়েকটি খাতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রপ্তানি ৪৩ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৩০ শতাংশ, অন্যান্য পাদুকা ৪৪ শতাংশ, কৃষিপণ্য ১৩ শতাংশ, প্লাস্টিকপণ্য ৭ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল ১৩ শতাংশ ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৫ শতাংশ বেড়েছে।
২০২৫ সালের জুনের তুলনায় জুলাই মাসে মোট রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ।