টানা তিন বছর ঘাটতির পর গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে।
প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স আসা, বৈদেশিক সহায়তা, ডলারের নমনীয় বিনিময় হার ও কঠোর রাজস্ব ব্যবস্থার কারণে বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে—২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সার্বিক উদ্বৃত্ত হয়েছে তিন দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে ঘাটতি ছিল চার দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আট দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল পাঁচ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈদেশিক বাণিজ্যে নয় দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে—রিজার্ভ বৃদ্ধি ও ডলারের স্থিতিশীল বিনিময় হারের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে যে, এই উদ্বৃত্তের মূল চালক ছিল চলতি হিসাবে ভারসাম্য। বড় ঘাটতির পর উদ্বৃত্ত ফিরে আসে। আর্থিক হিসাবেও উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। যদিও তা আগের বছরগুলোর তুলনায় কম।
চলতি হিসাবের তথ্য বলছে—২০২৪-২৫ অর্থবছরে চলতি হিসাবে এক বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত রেকর্ড করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ছয় দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার। এদিকে, আর্থিক হিসাবটি তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শেষ করেছে।
প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স আসা ও রপ্তানি আয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে। অন্যদিকে, কম পরিমাণে আমদানিও এতে ভূমিকা রেখেছে। চলতি হিসাব বেড়ে হয়েছে ৯৮১ মিলিয়ন ডলার।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স বেশি আসায় চলতি হিসাব ইতিবাচক হয়েছে। এটা একটা দিক। দ্বিতীয় দিকটি হলো আর্থিক হিসাব। আগে এই হিসাবে বড় ঘাটতি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ ও সহায়তার ফলে আর্থিক হিসাব বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।’
তার মতে, আর্থিক ও চলতি হিসাব দুটোই উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক বৈদেশিক বাণিজ্য ইতিবাচক হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আট দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে ৪৮ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এক বছর আগে তা ছিল সাড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
ডলারের প্রাপ্ততা কমে যাওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি ১১ দশমিক এক শতাংশ কমেছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি আবার বাড়তে শুরু করে।
ভোগ্যপণ্য ও পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় মোট আমদানি দুই দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কম থাকায় দেশে বিনিয়োগ কমেছে।
‘সামষ্টিক অর্থনীতি যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে বেসরকারি খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়তে পারে। তখন সার্বিক আমদানি বেড়ে যেতে পারে,’ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডি ফেলো।
তার মতে, এখন রিজার্ভ ভালো আছে। আমদানি বাড়লে অর্থনীতি তা সামাল দিতে পারবে। ‘তবে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ভবিষ্যতে আমদানি বাড়তে পারে।’