পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত আলোচনার পর ৩৫ শতাংশ থেকে শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এ বিষয়ে চুক্তি হয়নি এখনো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ মাসের শেষে চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
আলোচনা শেষে আগামীকাল সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
জানা গেছে, বিগত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন চুক্তির একটি খসড়া তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। ওই খসড়া পাওয়ার পর চূড়ান্ত মতামত দিয়ে ফেরত পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর দিনক্ষণ ঠিক করে যুক্তরাষ্ট্রে উভয় পক্ষের চুক্তি সই হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ৭ আগস্ট থেকে। বিষয়টি নিয়ে যৌথ বিবৃতি আসতে পারে শিগগির।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন কোন বিষয়ে একমত হয়ে চুক্তি করছে বাংলাদেশ- তা এখনো পরিষ্কার নয়। নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) হিসেবে বিষয়গুলো গোপন রাখা হয়েছে।
তবে ওই বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ বিসর্জনের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরে দুই দেশের (যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ) যৌথ বিবৃতি অবশ্যই আসবে। সব বিষয় জানানো হবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও চুক্তির বিষয়গুলো আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো বিষয় নেই।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন আমরা গোপনীয়তার চুক্তি করেছি। আসলে চুক্তিতে কিছু বিষয় আন্তর্জাতিক বিধিতে নির্দিষ্টভাবে গোপন থাকে। সেটি চুক্তিকারী উভয় দেশের জন্য, যেন অন্য কোনো দেশ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ না করতে পারে। এমনকি স্থানীয়ভাবেও যদি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি হয়, তাহলেও কিছু বিষয় থাকে- যা অন্য প্রতিষ্ঠানের সবার সামনে আনা যায় না। বিষয়টা এমনই।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চুক্তির ক্ষেত্রে নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট খুব একটা স্বাভাবিক বিষয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়টি নিশ্চিত করে চুক্তিগুলো করছে সেটা হচ্ছে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে তারা নিজস্ব নিরাপত্তাকে দেখছে। ফলে আলোচনার একটি গোপনীয় শর্ত আছে।
তবে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির মাধ্যেমে তাদের দেশে ব্যবসা বাড়ানোর সঙ্গে চীনসহ অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে ব্যবসায় নিরুৎসাহিত করতে চায়। রয়েছে বাংলাদেশের আরও কিছু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ করার মতো শর্তের আভাস। যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যার মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশ যেন চীনের দিকে বেশি না ঝোঁকে।
আরও জানা যায়, কিছু শর্ত এমন রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া যেসব মার্কিন পণ্যকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশকে একই সুবিধা না দেওয়ার শর্ত রয়েছে।
এসব বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার কোনো বিষয় থাকলে আমরা সে চুক্তিতে যাবো না নিশ্চয়। আমাদের নিজস্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেটা জলাঞ্জলি দিলে আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি হবে। তাহলে এমন বাণিজ্য চুক্তি করে কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, আর যেসব বিষয় ছিল যা পরোক্ষভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারে, আমরা আলোচনার মাধ্যমে সেটি থেকে বেরিয়ে এসেছি।