ভারতীয় একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘এগুলো দীর্ঘমেয়াদি তেল চুক্তি। তাই এগুলো এমন কিছু না যে চাইলেই তা রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাস্তিমূলক হুমকির পরেও ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে বলে শনিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন ভারত সরকারের দুইজন কর্মকর্তা।
ট্রাম্প ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন এবং গত মাসে ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও তেল কিনলে ভারতকে আরও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শুনেছেন ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে। এ বিষয়ে এখনই কোনো পরিবর্তন আসছে না।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির ফলে বৈশ্বিক তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পরও বিশ্ববাজারে তেলের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, আর তা সম্ভব হয়েছে এমন আমদানির কারণেই।
সূত্রটি জানিয়েছে, ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেলের মতো রাশিয়ান তেলের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে দামের সীমা নির্ধারণ করেছে, ভারত তার চেয়েও কম দামে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে।
শনিবার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের দুইজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, যাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি, জানিয়েছেন যে রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়ে ভারতের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিকল্পনা নিয়ে রয়টার্সের আনুষ্ঠানিক মন্তব্যের অনুরোধে ভারত সরকারের কোনো জবাব মেলেনি।
তবে শুক্রবার নিয়মিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ‘স্থিতিশীল ও সময়ে সময়ে পরীক্ষিত’ সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমরা দেখি বাজারে কী কী প্রস্তাব রয়েছে এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে কী রকম।’
এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে হোয়াইট হাউসের কাছে অনুরোধ জানানো হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেয়নি।
চলতি বছর পুনরায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করাকে তার প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যদি মস্কো ইউক্রেনের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো শান্তি চুক্তিতে না পৌঁছে, তাহলে যারা রাশিয়ান তেল কিনছে—এমন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা দেশ এবং রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেল ভারতের মোট সরবরাহের প্রায় ৩৫ শতাংশ।
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারত প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল রাশিয়ান তেল আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি।
ট্রাম্পের হুমকি ভারত সরকারকে হয়তো পিছিয়ে দিচ্ছে না, তবে রয়টার্সকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত রিফাইনারিগুলো জুলাই মাসের পর রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজনৈতিক চাপের কারণে নয়, বরং রাশিয়ান তেলের ওপর দেওয়া ছাড় ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ওই বছরই মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল। রাশিয়ার রপ্তানি কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক চাহিদা স্থিতিশীল থাকার কারণে এই ছাড় কমেছে, ফলে রাশিয়ার তেল আর আগের মতো লাভজনক থাকছে না।
রয়টার্স-কে দেওয়া তথ্যে চারটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের চারটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি—ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড—গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ান তেল ক্রয়ের বিষয়ে কোনো চাহিদা পাঠায়নি বা ক্রয় করেনি।
এটি রাশিয়ার তেলের ওপর সাম্প্রতিক নির্ভরতা কমার ইঙ্গিত দিতে পারে, বিশেষ করে ছাড় কমে যাওয়ার পর।
রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফটসহ কয়েকটি রুশ প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ভারতের প্রধান তেল পরিশোধন কোম্পানি নাইয়ারা এনার্জিকে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার পর নাইয়ারার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। রয়টার্স গত সপ্তাহে জানিয়েছে, নাইয়ারা এনার্জির পাঠানো তেলজাত পণ্যে বোঝাই তিনটি জাহাজ এখনো তাদের কার্গো খালাস করতে পারেনি। ইইউর নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে।