মূলত গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করে এ তহবিল গঠন করা হয়। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ তহবিলে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা জমা হয়। গ্যাস খাতের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্যাসের মজুদ বাড়েনি। অন্যদিকে, এ তহবিল থেকে এলএনজি কিনতে ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ প্রদান করার পর তহবিলের অর্থ এখন প্রায় নিঃশেষের পথে। বর্তমানে জিডিএফে জমা রয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে বিগত ১৬ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও এর প্রায় ৫১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ প্রদান ও এলএনজি কিনতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডিএফে গ্রাহকের জমা দেয়া অর্থের বেশির ভাগ নিয়ম না মেনে ব্যবহার করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, জিডিএফে জমাকৃত অর্থের মধ্যে মোট ৯ হাজার কোটি টাকা এলএনজি আমদানিতে ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে গেছে, যা তহবিলে জমাকৃত অর্থের ৫০ দশমিক ৮১ শতাংশ। বর্তমানে এ তহবিলে জমা রয়েছে ১ হাজার ৩০৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
২০২২ সালে দেশে গ্যাসের সরবরাহ সংকট কাটাতে তীব্র অর্থ সংকটে থাকা পেট্রোবাংলাকে ২ হাজার কোটি টাকা জিডিএফ থেকে ঋণ হিসেবে দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানায় জ্বালানি বিভাগ। পরে অর্থ বিভাগ এ তহবিল ব্যবহারে সম্মতি দেয়। এ পর্যন্ত এ তহবিল থেকে পেট্রোবাংলা মোট ৬ হাজার কোটি টাকা এলএনজি কিনতে ঋণ নিয়েছে।
এর আগে দেশে করোনা মহামারীকালে তীব্র অর্থ সংকটে পড়লে দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার আইন করে। এ আইনের আওতায় ২০২১ সালে পেট্রোবাংলা জিডিএফকে নিজের উদ্বৃত্ত তহবিল দেখিয়ে অর্থ বিভাগকে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই গ্যাসের দাম গড়ে ১১ শতাংশের কিছু বেশি হারে বাড়িয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করে, যা কার্যকর হয় ওই বছরের ১ আগস্ট। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ভোক্তা পর্যায়ে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। তখন দামের একটি অংশ (প্রতি ঘনমিটারে ৪৬ পয়সা) গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে জমার আদেশ দেয়া হয়।
দেশে গ্যাস খাতে বর্তমানে সাড়ে আট টিসিএফের কিছু বেশি মজুদ রয়েছে। বিগত চার বছরে গড়ে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্থানীয় গ্যাসের মজুদ কমে গেছে। স্থানীয় গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধিতে পেট্রোবাংলা ৫০টি কূপ খননের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চলতি বছরের মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আরো ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ২০২৮ সালের মধ্যে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। এজন্য জিডিএফ ব্যবহারের কথা। কিন্তু তহবিল সংকটে এসব প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।