মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপের প্রেক্ষাপটে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা।
মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপের প্রেক্ষাপটে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। তারা পণ্য আমদানি বাড়াতে মার্কিন রফতানিকারকদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সমঝোতা ও অঙ্গীকার করেছেন। সরকার কর্তৃক ব্যবসায়ীদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। এরই মধ্যে অন্তত ৭৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যবসায়ী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি আরো কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমীরুল হক, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, পরিচালক মোশাররফ হোসেন ও মাসুদ রানা এবং সালমা গ্রুপের পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব।
জানা গেছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মার্কিন কৃষিপণ্য রফতানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার পর গত বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি দলটি দফায় দফায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সয়াবিন বীজ ও তুলা আমদানির জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। আবার বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি প্রতিশ্রুতিও দেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সয়াবিন বীজ আমদানির জন্য সমঝোতা করেছি। এছাড়া ভুট্টা, এলপিজি ও গম আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
বাংলাদেশ বর্তমানে গ্রোয়িং কান্ট্রি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ১৩০ মিলিয়ন ডলারের সয়াবিন বীজ নিয়েছি, একটা চুক্তি করেছি। বেসরকারি খাত যেসব চুক্তি করছে, সেখানে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি কীভাবে রফতানি বাড়ানো যায় সেজন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, এখন এটিকে আরো কমিয়ে আনা যায় কিনা, সেটিও দেখা হচ্ছে।’
সয়াবিন বীজ ছাড়াও ১৯ হাজার টন তুলা আমদানির জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে দেশের বস্ত্র খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সালমা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল ইনকরপোরেটের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের ছয় হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করেছে। এশিয়া কম্পোজিট একই রকম আরেকটি চুক্তি করেছে। এছাড়া মোশাররফ গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের লুইস ড্রেফুস গ্রুপ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সাত হাজার টন তুলা আমদানির জন্য চুক্তি করেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লিখিতভাবে ১ বিলিয়ন ডলারের ওপর এমওইউ করার কথা। কিন্তু আমরা মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এর আংশিক আমরা কিনেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এটার প্রায় ৭৫ শতাংশ মিটিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। আমরা খাদ্যদ্রব্য, তুলা, এলএনজি, এলপিজি এবং আরো কিছু জিনিসপত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা অকল্পনীয় একটি অর্জন।’
কোনো দেশ আজ পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা মার্কিন শুল্ক ২০ শতাংশে নিয়ে আসতে পেরেছেন। তিনি আরো কিছু সুবিধা নিয়ে দেশে ফিরতে চান। এজন্য প্রয়োজন হলে আরো কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে উনার।’
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের তুলা কিনে থাকি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো ১ বিলিয়ন ডলারের তুলা কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এটাকে ২ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাব।’
ওয়াশিংটন থেকে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলওএবি) সভাপতি আমীরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের একটা সমঝোতা সই হয়েছে। সরকার ও দেশের বেসরকারি খাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এ কারণে আমরা ২০০-৩০০ মিলিয়ন ডলারের ওপর ক্রয় সমঝোতা করেছি।’