এশিয়ায় কারখানা উৎপাদনে নিম্নমুখিতা অব্যাহত ছিল সদ্যসমাপ্ত জুলাইয়েও।
এশিয়ায় কারখানা উৎপাদনে নিম্নমুখিতা অব্যাহত ছিল সদ্যসমাপ্ত জুলাইয়েও। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের জরিপ অনুসারে, জুলাইয়ের বৈশ্বিক চাহিদার মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ঘিরে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা এ অঞ্চলের ব্যবসায়িক মনোভাবকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। এ পরিস্থিতি এশিয়ার উৎপাদন খাতের শ্লথ পুনরুদ্ধারের গতিকে আরো দুর্বল করে তুলেছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার আগেই গতকাল প্রকাশিত এ জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। তাই বিশ্লেষকদের কেউ কেউ আশা করছেন, শুল্কজনিত অনিশ্চয়তা কিছুটা কমে আসায় সামনের মাসগুলোয় এশিয়ার উৎপাদন খাতে কিছুটা গতি ফিরে আসতে পারে।
এশিয়ার রফতানি নির্ভর শক্তিধর দুই অর্থনীতি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। গত মাসে দেশ দুটির উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়েছে। বিশ্লেষণ অনুসারে, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর এতদিন এশিয়ার প্রবৃদ্ধি নির্ভর করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে তা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতি চীনের উৎপাদন খাত গত মাসে সংকোচনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ব্যবসার গতি শ্লথ হয়ে আসায় উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান। পুরো এশিয়ার অর্থনীতির জন্য এটিকে নেতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জুলাইয়ে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল চায়না জেনারেল ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স (পিএমআই) কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৫, যা জুনে ছিল ৫০ দশমিক ৪। রয়টার্সের জরিপে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল ৫০ দশমিক ৪। এ সূচক ৫০-এর নিচে নামা মানে খাতটি সংকোচনের পথে রয়েছে।
এ তথ্য প্রকাশের আগের দিন সরকারিভাবে জানানো হয়, চীনের উৎপাদন খাত টানা চতুর্থ মাস হিসেবে জুলাইয়ে সংকুচিত হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে রফতানি বাড়াতে চীনের কারখানা কার্যক্রমে যে জোয়ার এসেছিল, তা এখন স্তিমিত। একই সঙ্গে দেশীয় চাহিদাও দুর্বল রয়ে গেছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ ঝিচুন হুয়াং বলেন, ‘এ জরিপ আরো একবার প্রমাণ করছে যে চীনের অর্থনীতি গত মাসে গতি হারিয়েছে। যার প্রধান কারণ দেশীয় চাহিদায় দুর্বলতা।’
অন্যদিকে জাপানের এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই জুলাইয়ে কমে ৪৮ দশমিক ৯ হয়েছে, যা জুনে ছিল ৫০ দশমিক ১। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির ওপর পড়ছে।
এ জরিপের বেশির ভাগ তথ্য সংগৃহীত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণার আগেই। যেখানে জাপানের ওপর শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার পিএমআই সূচক জুলাইয়ে আরো এক ধাপ নেমে ৪৮ হয়েছে, যা জুনে ছিল ৪৮ দশমিক ৭। এ নিয়ে টানা ষষ্ঠ মাসের মতো দেশটির উৎপাদন খাত সংকুচিত হলো।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের অর্থনীতিবিদ উসামা ভাট্টি বলেন, ‘জুলাইয়ে উৎপাদন ও নতুন ক্রয়াদেশ উভয়ই আগের চেয়ে বেশি হারে কমেছে। কারখানাসংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকারে দেয়া তথ্য বলছে, দেশীয় অর্থনীতির দুর্বলতার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রভাব পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে।’
অন্যদিকে জুলাইয়ে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে উৎপাদন খাত সম্প্রসারণ হয়েছে। তবে তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় খাতটি সংকুচিত হয়েছে।