আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সামান্য বেড়েছে। প্রায় সব বাজার আদর্শেই ঊর্ধ্বমুখিতায় শেষ হওয়ার পথে ছিল পণ্যটির সাপ্তাহিক বাজার।
আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সামান্য বেড়েছে। প্রায় সব বাজার আদর্শেই ঊর্ধ্বমুখিতায় শেষ হওয়ার পথে ছিল পণ্যটির সাপ্তাহিক বাজার। জ্বালানি পণ্যটির বাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন আরোপিত শুল্কহারের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে আছেন। একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া ও দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া অন্যান্য দেশের ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের হুমকিও এখন বাজারে বড় প্রভাবক হয়ে উঠেছে। খবর রয়টার্স।
ফিউচার মার্কেটে গতকাল জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট কেনাবেচা হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৭১ ডলার ৮৯ সেন্টে। আগের দিনের তুলনায় দাম বেড়েছে ব্যারেলে ১৯ সেন্ট বা দশমিক ২৬ শতাংশ। মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে ২০ সেন্ট বেড়ে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই কেনাবেচা হয়েছে ৬৯ ডলার ৪৬ সেন্টে।
এর আগে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল ১ শতাংশের বেশি। আগের দিনের নিম্নমুখিতা কাটিয়ে গতকাল কিছুটা স্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরেছে জ্বালানি পণ্যটির দাম। তবে সার্বিক হিসেবে গতকাল ৫ শতাংশেরও বেশি সাপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধির পথে ছিল ব্রেন্টের দাম। একই সঙ্গে প্রায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধির পথে ছিল ডব্লিউটিআইর বাজার।
বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এজন্য দেশভেদে সর্বনিম্ন ১০ থেকে ৪১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা দেশগুলোর মধ্যে কানাডা, ভারত ও তাইওয়ানসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়া দেশও রয়েছে। ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য দেশগুলোকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে যেসব বৃহৎ অর্থনীতি ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাজ্য।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ডিবিএস ব্যাংকের এনার্জি সেক্টর টিম লিড শুভ্র সরকার বলেন, ‘আমরা মনে করছি, বাজারে যেভাবে আশঙ্কা করা হয়েছিল শুল্ক বিবাদ পরিস্থিতি তার চেয়ে সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। গত কয়েক দিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে দরবৃদ্ধির প্রবণতার পেছনে এটিই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।’
গতকাল শেষ হওয়া সপ্তাহে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারদরে ঊর্ধ্বমুখিতায় আরেকটি বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়ার কাছ থেকে পণ্যটি ক্রয়কারী দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি। এতে জ্বালানি তেলের বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটা ও বাজার থেকে পণ্যটির সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেয়া এক নোটে জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে সমুদ্রপথে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখলে চীন ও ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এতে রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে পরিবাহিত সাড়ে ২৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের সরবরাহ এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। বৈশ্বিক জ্বালানি তেল ব্যবহারে চীন ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
তবে মার্কিন শুল্কনীতি বাজারে আপাতত পণ্যটির দাম বাড়ালেও সামনের দিনগুলোয় তা জ্বালানি তেলের চাহিদাকে চাপে ফেলে দেয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের অনেকেই। তাদের ভাষ্যমতে, এ শুল্কনীতির ফলে এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়লে তা জ্বালানি তেলের চাহিদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।