ডিসিসিআই মনে করে, ভবিষ্যতে বিশেষ করে, বেসরকরিখাতের আস্থা পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আরো নমনীয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও খাতভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল মুদ্রানীতির কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের পাশাপাশি সার্বিক শিল্পায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানায় সংগঠনটি। ২০২৫ সালের জুন মাসে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ডিসিসিআই মনে করে, ব্যবসায়িক পরিবেশের অনিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলার অস্থিতিশীলতা, সীমিত জ্বালানি সরবরাহ এবং সর্বোপরি কঠোর মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির এই নিম্নগতি আরো তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩ লাখ কোটি টাকায়, যা মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। এটি আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করছে, সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার।
ব্যবসায়িক আস্থার এই নিম্নমুখিতা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতিসুদ হার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ সুদের হার বিশেষকরে ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং উৎপাদনশীল খাতের ওপর অতিরিক্ত ঋণের ভার চাপিয়ে দিচ্ছে, যা অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাহত করছে। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী ছয় মাসের জন্য বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী নীতিতে ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এর বিপরীতে সরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২০ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা অর্থনীতিতে আর্থিক চাপ বৃদ্ধি করবে, সেই সঙ্গে করদাতাদের ওপর বোঝা বাড়বে, পাশাপাশি বেসরকারিখাতের ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ আরো সংকুচিত করবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সুদের হার হ্রাস এবং ঋণের শর্তাবলী সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার। সেই সঙ্গে সৎ ঋণগ্রহীতাদের পুনরুদ্ধারে সহায়তা এবং তাৎক্ষণিক খেলাপির ঝুঁকি এড়াতে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে ডিসিসিআই আর্থিক খাতে কাঠামোগত সংস্কার, ঋণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং তারল্য নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারির ওপর জোরারোপ করছে ঢাকা চেম্বার।
ডিসিসিআই-এর মতে, ভবিষ্যতে বিশেষ করে, বেসরকরিখাতের আস্থা পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আরো নমনীয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও খাতভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল মুদ্রানীতির কোনো বিকল্প নেই।