চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। বরখাস্তের পর তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সংযুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কমিশনার জাকির হোসেন গত ২৮ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে আয়োজিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং এনবিআরের সামনে অবস্থান নেন। এ ঘটনায় রাজস্ব আদায়, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং সার্বিক সেবা ব্যাহত হয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পরই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আসে।
সূত্রমতে, সরকার পরিবর্তন, আন্দোলন, বিক্ষোভ, গণঅভ্যুত্থান, দুর্ভিক্ষ, করোনা মহামারিসহ সব সংকটে দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কোনোদিন বন্ধ হয়নি। তবে সেদিন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মো. জাকির হোসেন কাস্টম হাউসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঢাকায় এনবিআরের চলমান আন্দোলনে পাঠিয়ে দেন। তিনি নিজেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সব কার্যক্রম বন্ধ করে ঢাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তথ্য দিয়েছে। যার ফলে সরকার তাকে বরখাস্ত করেছে বলে জানা গেছে।
এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানানোর গত প্রায় দুই মাসব্যাপী আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন। কলমবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
সবশেষ ২৮ ও ২৯ জুন লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করা হয়। এই দুইদিন সারাদেশের ভ্যাট, কাস্টমস ও কর অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআরের সামনে আন্দোলনে অংশ নেন। সরকার বারবার অনুরোধ করার পরও কার্যক্রম চলমান ছিল। এতে রাজস্ব আদায়, আমদানি-রপ্তানি ও সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটে। সর্বশেষ সরকারের আশ্বাসে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ২৯ জুন সন্ধ্যায় ঐক্য পরিষদ সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করেছে ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ দশমিক ৭ কোটি টাকা। বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।