কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটে দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। তবে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে কেবল ৩০ মেগাওয়াট। মার্চ মাসের শুরুতে ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা গেলেও এখন তা ৩০ মেগাওয়াটে নেমেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে যে পরিমাণ পানি রয়েছে সে অনুযায়ী দুটি ইউনিটে ৪০–৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কিন্তু ৪০–৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ের যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সারা বছর উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর কাপ্তাই হ্রদের পানি কর্ণফুলী নদীতে ফেলা হয়। আবার কর্ণফুলী নদীর পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে সরবরাহ করে ওয়াসা। কর্ণফুলী নদীর পানি বছরজুড়ে প্রবাহিত না হলেও সমুদ্রের পানির গতিবেগ বাড়ার সুযোগ থাকায় ওয়াসার পরিশোধিত পানিতে লবণাক্ততা বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহের সঙ্গে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্পর্ক থাকায় সারা বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সচল রাখতে হয়।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) মাধ্যমে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাপের রুল কার্ড (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত হ্রদে ৮০ দশমিক ৮ মিনস্ সি লেভেল (এমএসএল) পানি ছিল।
যদিও স্বাভাবিকভাবে পানির থাকার কথা ৮৮ দশমিক ৫১ এমএসএল। বর্তমানে ৮ এমএসএল পানি কম রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত ও বিকল্প উৎস থেকে (উজান) পানি না এলে হ্রদে পানি বাড়ার সুযোগ নেই। গতকালের তথ্যমতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে কেবল ২ নম্বর ইউনিট ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি ইউনিট সচল রয়েছে। এক ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াট। কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় আপাতত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো কিংবা কমানোর পরিকল্পনা নেই।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিপিডিবির দৈনিক উৎপাদন রেকর্ড অনুযায়ী, মার্চের শুরুতে দৈনিক ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত করা হতো কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। সর্বশেষ ৮ মার্চ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল। ৯ই মার্চ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি উৎপাদন ইউনিটের মধ্যে কেবলমাত্র একটি ইউনিট দিয়েই ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের থেকে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ মাত্র ৩০–৪০ পয়সা (সব ইউনিট সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া সাপেক্ষে)। এত স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হওয়ায় উৎপাদনের দিকে সাশ্রয়ী ভূমিকা রেখে আসছে কেন্দ্রটি। তবে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) চাহিদা অনুযায়ী, উৎপাদন বাড়ানো–কমানো হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী জানান, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয় হয়, সেটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যয় অনেকাংশে সাশ্রয়ী, মাত্র ৪০ পয়সা। যে কারণে এটিকে উৎপাদন বাড়ানো গেলে ব্যয় কম হয় বিপিডিবির।
বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় আমরা কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি। দুটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও পানি সংরক্ষণ করে যাতে বছরজুড়ে উৎপাদন করা যায় সেজন্য একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
-দৈনিক অর্থনীতি
Discussion about this post